মিয়ানমারে তিন ধাপের ভোটের প্রথম পর্ব রবিবার শেষ হয়েছে। সামরিক সরকার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীনের সহায়তায় জান্তা তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ধ্বংসাত্মক অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতী জানিয়েছে, কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। অনেককে বন্দুকের মুখে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
আরেকটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুন শহরের কেন্দ্রস্থলে দিনের প্রথম দিকে ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ভোটারই সামরিক প্রশাসনের অধীনে কর্মরত বেসামরিক কর্মচারীদের পরিবারের সদস্য।
পাইনমানা এবং জাবুথিরির কমপক্ষে আটটি ভোটকেন্দ্রে, বাসিন্দারা প্রতিটি স্থানে মাত্র ২০ থেকে ৫০ জনকে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
পাইনমানা এবং জাবুথিরি শহরতলী পরিদর্শনকারী একজন ব্যক্তি বলেছেন, পিনমানায়, খুব কম লোক ছিল - অত্যন্ত কম। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের আবাসনের কাছাকাছি ভোটকেন্দ্রে, শত শত লোক লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল।”
ভোটকেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তা দৃশ্যত কঠোর ছিল, কিছু স্থানে ১০ জনেরও বেশি কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল, যার মধ্যে পুলিশ, সাদা পোশাকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং জান্তা-সমর্থিত পিউ সাও তি মিলিশিয়ার সশস্ত্র সদস্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সেনাশাসন বিরোধী গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছিল।
সাগাইং অঞ্চলের পাল টাউনশিপের অভ্যুত্থান-বিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “যাদের ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে, তারা যেতে পারেন। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য সরাসরি বাড়ি ফিরে যান।”
কিছু লোককে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছিল উল্লেখ করে ওই কমকর্তা বলেন, “আমরা বুঝতে পারি ভোট দেওয়ার জন্য লোকেদের দিকে বন্দুক তাক করা হয়েছে।”
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অস্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার। ওই সময় সামরিক বাহিনী নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপরই দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনী নিপীড়ন শুরু করলে অনেক বিক্ষোভকারী অস্ত্র তুলে নেয়, যা পরবর্তীতে জান্তা-বিরোধী এক দেশব্যাপী বিদ্রোহে রূপ নেয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাকা মিয়ানমার জান্তা সরকারের বৈধতার জন্য নির্বাচন ঘোষণা করেছিল। তবে এই নির্বাচনে জান্তা সমর্থিত ছয়টি গ্রুপকে অংশগ্রহণের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দেশটির বৃহত্তর রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।