জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এবারের ভর্তি যুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভোগান্তি কমাতে এবং সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ।
ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক সেবা দিতে জাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তথ্য সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কেন্দ্রগুলো ছিল; ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, পদার্থবিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, মীর মশাররফ হোসেন হল গেট, চৌরঙ্গী, প্রান্তিক গেট এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পরীক্ষার শেষ শিফট পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবকরা এসব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সুপেয় পানি, টিস্যু এবং বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা রাখা হয়।
মানবিক বিবেচনায় প্রতিটি সহায়তা কেন্দ্রে মায়েদের জন্য ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদের জরুরি প্রয়োজনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থাও রাখা ছিল।
ভর্তি পরীক্ষার সময় দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে ওয়াশরুম সংকটের বিষয়টি মাথায় রেখে জাকসু ক্যাম্পাসে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা গতবারের ২৬টি থেকে বাড়িয়ে ৪৮টিতে উন্নীত করে।
এছাড়া, ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে এস্টেট ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সহায়তায় ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলোতে নিয়মিত পানি ছিটানো হয়। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাও প্রস্তুত রাখা হয়।
ভর্তিচ্ছুদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ পরিবহনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। অটো-রিকশা ও ব্যাটারিচালিত কার্টের জন্য নির্দিষ্ট ভাড়া নির্ধারণ, নির্ধারিত রুট অনুসরণ এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চালকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। যানজট নিরসনে ডেইরি গেট থেকে প্রান্তিক গেট পর্যন্ত সড়ক যানজটমুক্ত রাখা হয়।
যেসব শিক্ষার্থীর একাধিক ইউনিটে বা পরপর দুই দিন পরীক্ষা ছিল, তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রী হলগুলোতে রাত্রীযাপনের সুব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ এবং অতিরিক্ত দাম আদায় প্রতিরোধে জাকসু নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চালায়।
পঞ্চগড় থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, “আমার দুটি ইউনিটে পরীক্ষা ছিল। ঢাকায় থাকার মতো আত্মীয় না থাকায় খুব চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু, জাকসুর ব্যবস্থাপনায় হলে থাকার সুযোগ পাওয়ায় সেই চিন্তা দূর হয়েছে। অচেনা ক্যাম্পাসে তথ্য সহায়তা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে পরীক্ষাকেন্দ্র সহজে খুঁজে পেয়েছি—এটা সত্যিই অনেক উপকারে এসেছে।”
চট্টগ্রাম থেকে মেয়েকে নিয়ে আসা অভিভাবক তাজরিন বেগম বলেন, “ভর্তি পরীক্ষার সময় সাধারণত অভিভাবকদের রোদে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এবার পর্যাপ্ত বসার চেয়ার ও পানির ব্যবস্থা থাকায় খুব স্বস্তিতে সময় কাটাতে পেরেছি। স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতাও ছিল প্রশংসনীয়।”
সার্বিক বিষয়ে জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি সর্বোচ্চ কমিয়ে আনাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। আবাসন, যাতায়াত, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ—প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছি। আগামী বছর থেকে বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার যে ঘোষণা এসেছে, তা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির একটি বড় অর্জন।”
গত ২১ ডিসেম্বর সি ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে শুরু হওয়া ভর্তি পরীক্ষা আজ এ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি ইউনিটে মোট ১ হাজার ৮৪২টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৯ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ, প্রতি আসনের জন্য গড়ে ১১৯ জন পরীক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
সার্বিকভাবে বলা যায়, পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা ও মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে এবারের ভর্তি পরীক্ষায় জাকসুর ভূমিকা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সহায়ক হয়েছে।