বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও আগামীকাল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এ তথ্য জানান। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত ও মর্মাহত। তার মৃত্যুতে জাতি অভিভাবককে হারিয়েছে। এই গভীর শোকের মুহূর্তে আমি তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক সহকর্মী এবং অগণিত কর্মী সমর্থকদের সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের সবাইকে এই গভীর শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দেন।”
তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন দেশের রাজনীতিতে এক পরম মহিমান্বিত ব্যক্তিত্ব। গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার অসামান্য ভূমিকা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে।”
স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার আপসহীন নেতৃত্ব বারবার জাতিকে গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে এবং মুক্তির প্রেরণা জুগিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশ ও জাতির প্রতি তার সমুজ্জ্বল অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা গণমুখী নেতৃত্ব এবং প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রাখতে তার অবিচল ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমন একজন মহান দূদর্শী ও নিখাদ দেশপ্রেমিক নেত্রীর শূণ্যতা পূরণ হবার না।”
“এই শোকাবহ মুহূর্তে আপনাদের প্রতি আমার উদার্ত আহ্বান, আসুন আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে মহান আল্লাহর দরবারে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “একই সঙ্গে জাতির এই কঠিন সময়ে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি। শোকের এই সময়ে কেউ যেন অস্থিতিশীলতা না নাশকতার অপচেষ্টা চালাতে না পারে। সে বিষয়ে আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। এ সময়ে আসাদের সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত জরুরি।”
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে তিনি বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং আগামীকাল তার নামাজে জানাজার দিনে এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করছি। নামাজে জানাজাসহ সব ধরনের শোক পালনে শৃঙ্খলা বজায় রাখায় জন্য আমি সবার প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।”
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় ‘দেশনেত্রী’, ‘আপসহীন’ উপাধিতে ভূষিত বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া লিভার, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস ও ইনফেকশনজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। উল্লেখ্য চলতি বছর ৭ জানুয়ারি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি ঘটে। তিনি দেশে ফিরে আসেন। তবে বয়স প্রতিকূল থাকায় এবং নানাবিধ রোগের জটিলতার কারণে তিনি প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন।
সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, তিনি পূর্বের ন্যায় এবারও কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চিরদিনের মতো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।