সারা বাংলা

খালেদা জিয়ার শ্বশুরবাড়িতে কোরআন তেলাওয়াত, মসজিদে হবে দোয়া

বেগম খালেদা জিয়াকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের মানুষ।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে তার মৃত্যুর খবর জানার পর শ্বশুরবাড়িতে চলছে দোয়া ও কোরআন খতম। গাবতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়, বাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জড়ো হয়ে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করছেন।

পাশাপাশি দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিটি মসজিদে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হচ্ছে।

নশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রাজ্জাকুল আমিন রোকন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাড়িতে সকাল থেকেই কোরআন খতম চলছে। জিয়াউর রহমানের গ্রাম ও বাগবাড়ী এসইউ ফাজিল মাদ্রাসায় আগামী সাতদিন সকাল ১০টা থেকে জোহরের নামাজ পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত হবে।” 

তিনি বলেন, “আমাদের ইউনিয়নে যতগুলো মাদ্রাসা ও এতিমখানা সবগুলোতেই কোরআন তেলাওয়াত করা হচ্ছে। নশিপুর ইউনিয়নের যতগুলো মসজিদ রয়েছে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের পর বিশেষ দোয়া হবে।”

নশিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জোবাইদুর রহমান গামা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আমরা বগুড়াবাসী সবসময় গর্ববোধ করতাম। বগুড়ায় তার শশুর বাড়ি এই পরিচয় আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলাদা একটি মর্যাদা এনে দিয়েছিল। তার মৃত্যুতে সেই অধ্যায়ের যেন সমাপ্তি ঘটল।”

গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, “দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই নেত্রীর মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবককে হারালেন। তার নেতৃত্ব, ত্যাগ ও সংগ্রাম আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”

গাবতলী পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম বলেন, “খালেদা জিয়া শুধু আমাদের নেত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের মা। আজ আমরা আমাদের মাকে হারালাম। তার মৃত্যুতে শুধু গাবতলী নয়, পুরো বাংলাদেশে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। আমরা মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তিনি যেন নেত্রীকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।”

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মীর শাহে আলম বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ এক অবিচল অভিভাবককে হারাল। দেশপ্রেম, ত্যাগ ও আপসহীন নেতৃত্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিরকাল জাতির হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।” 

বেগম খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করে শাহে আলম সবার কাছে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া প্রার্থনা করেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, “দেশের ইতিহাসের অর্ধেক অংশই বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে গণতন্ত্র উত্তোরণের জন্য, দেশ পরিচালনার জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য বেগম খালেদা জিয়া যে কাজগুলো করে গেছেন সেগুলো স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশের দলমত নির্বিশেষে সব পর্যায়ের মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা করতেন। তার কথায় অনেক জটিল সমস্যা সমাধান হয়ে যেত। আমাদের আশা ছিল, দেশবাসীর আশা ছিল বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দেশের এই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের পরামর্শ দেবেন। কিন্তু আমরা তাকে হারিয়ে ফেললাম।”

জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, “আমরা আজকে গণতন্ত্রের মাকে হারালাম। আমাদের অভিভাবককে হারালাম। আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ঐক্যের প্রতীককে হারালাম। কেন্দ্রীয়ভাবে যে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি আমরা পালন করব। ইতোমধ্যে বগুড়া জেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় কোরআন খতম চলছে।”

বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে তার পক্ষে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।