জাতীয়

রাতভর মায়ের পাশে বসে ছিলেন তারেক রহমান

শৈশবেই হারিয়েছেন বাবা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। এক দশক আগে হারিয়েছেন একমাত্র ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে। এক-এগারো সরকারের সময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারেক রহমান। শুরু হয় দীর্ঘ নির্বাসিত ও সংগ্রামী জীবন।

আপন মানুষ বলতে ছিলেন মা—আপসহীন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে মায়ের সান্নিধ্যে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফেরার দিন গুনছিলেন।

এরই মধ্যে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। এমন পরিস্থিতিতেই দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরেন তারেক রহমান।

ঐতিহাসিক এই প্রত্যাবর্তনের মাত্র ৫ দিনের মাথায়, ৩৭ দিন চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বিএনপি ও মেডিকেল বোর্ড সূত্র জানায়, সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। যেন কোনো কষ্ট না হয়, সে জন্য তাকে ব্যথানাশক ও ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়।

মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য জানান, খালেদা জিয়া তখন ‘গভীর ঘুমে’ ছিলেন। ব্লাড প্রেসার ধরে রাখা যাচ্ছিল না বলে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়। 

চিকিৎসকরা জানান, পরিবারের সদস্যরা পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন পাশে থাকার, দোয়া করার। পরিস্থিতি অনুযায়ী কখনো অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কখনো দেওয়া হয়নি।

মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, তারেক রহমান সোমবার সারাদিন নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে আসেন। যতক্ষণ ছিলেন, মায়ের পায়ের কাছেই বসে ছিলেন। রাত আনুমানিক ২টার দিকে বাসায় যান। ডাক্তাররা  ধারণা করছিলেন, রাতটা হয়তো তিনি (খালেদা জিয়া) পার করতে করবেন। তবে বাসায় পৌঁছানোর পরপরই তারেক রহমানকে ফোন করা হয়। তিনি দ্রুত আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, পুরো সময় তিনি মায়ের কাছে বসে কাটিয়েছেন্ 

আইসিইউ কনসালট্যান্ট ডা. জাফর ইকবাল বলেন, “ব্লাড প্রেসার ও হার্টবিটের ওঠানামা মনিটরে দেখেই তারেক রহমান বুঝে যাচ্ছিলেন পরিস্থিতির গভীরতা। ডাক্তারদের গতিবিধি দেখেই তিনি সবকিছু অনুধাবন করছিলেন। আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনি।”

তিনি আরো জানান, তারেক রহমান বারবার বলেছেন—আপনারা পাঁচ বছর ধরে আমার মাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। আপনাদের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আপনারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, করবেন—এটা আমরা জানি।” 

মেডিকেল বোর্ড জানায়, ১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। এরপর আর কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। এর আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশেষ করে ছোট ছেলের স্ত্রী শামিলা রহমান, ভাই শামীম ইস্কান্দার ও দীর্ঘদিনের সহকারী ফাতেমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার জানান, কিডনি তুলনামূলক ভালো থাকলেও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও প্রভাব ফেলে। বয়স ও জটিলতা বিবেচনায় সব চিকিৎসা একসঙ্গে দেওয়া সম্ভব ছিল না।

ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ওষুধ কার্যকর হচ্ছিল না, ফলে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে।” 

শেষ সময়ে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পাশে ছিলেন তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, নাতনি জাইমা রহমান, পুত্রবধূ শামিলা রহমান সিঁথি, ভাই শামীম ইস্কান্দার, বড় বোন সেলিনা ইসলামসহ নিকটাত্মীয়রা।

গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর তাকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। দেশি-বিদেশি ৩০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড শেষ পর্যন্ত তার চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিল।

ঢাকা/আলী/ইভা