বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শহর জলপাইগুড়িও শোকস্তব্ধ।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইম অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার নয়াবস্তি এলাকায়। গতকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা থেকে প্রায় ৪৩৪ কিলোমিটার দূরের জলপাইগুড়িতেও শোকের ছায়া নেমে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলপাইগুড়িতে খালেদা জিয়ার শৈশবের নানা স্মৃতি বিদ্যমান থাকায় অনেকেই অনুভব করছেন, যেন তারা নিজেদেরই একজনকে হারালেন।
খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশবের কিছু বছর তিনি এখানেই কাটান।সপরিবারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে যাওয়ার আগে তিনি জলপাইগুড়ির দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী নীলঞ্জন দাশগুপ্ত স্মৃতিচারণ করে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, “খালেদা জিয়ার বাবা মোহাম্মদ এস্কান্দার আমার বাবার চা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘দাস অ্যান্ড কোম্পানি’-তে এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। জলপাইগুড়ি শহরের নয়াবস্তি এলাকার বাড়িতে খালেদা জিয়া জন্মগ্রহণ করেন। দেশভাগের পরও তাঁর পরিবার জলপাইগুড়িতে বসবাস করত এবং ১৯৫০-এর দশকে তাঁরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান।”
জলপাইগুড়ির ইতিহাসবিদ উমেশ শর্মার মতে, খালেদা জিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল এই শহরেই। শর্মা জানান, “খালেদা জিয়া নয়াবস্তি এলাকার যোগমায়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং এরপর সমাজপাড়ার সুনীতিবালা সদর গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। তবে ততদিনে তাঁর আত্মীয়-স্বজনের অধিকাংশ পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার বাবাও সেখানে পাড়ি জমান।”
শর্মা আরো উল্লেখ করেন, একটি আনুষ্ঠানিক সম্পত্তি বিনিময়ের মাধ্যমে তাঁদের (খালেদা জিয়ার) পরিবার দেশত্যাগ করেছিল। তিনি বলেন, “এস্কান্দার সাহেব অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পত্তি বিনিময় করে পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান। চক্রবর্তীর পরিবার এখনও নয়াবস্তির সেই বাড়িতেই বসবাস করছে।”
যাঁরা তাঁর পরিবারকে মনে রেখেছেন, তাঁরা সীমান্ত ও দশকের ব্যবধান ছাপিয়ে টিকে থাকা এক আবেগপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন। অধুনালুপ্ত ‘দাস অ্যান্ড কোম্পানি’র সাবেক স্বত্বাধিকারী নীলঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, “প্রাথমিক স্কুলজীবনে শিউলি মণ্ডল ছিলেন তাঁর (খালেদা জিয়ার) খুব কাছের বন্ধু। শিউলি পরবর্তীতে শিশুনিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হয়েছিলেন। আমার আজও মনে আছে, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী হওয়ার খবর শুনে শিউলিদি কতটা আনন্দিত হয়েছিলেন। তাঁর (খালেদা জিয়ার) মৃত্যু আমাদের খুব কষ্ট দিয়েছে।”
প্রতিবেশীরাও সীমান্তের ওপাড়ে টিকে থাকা এই অটুট বন্ধনের কথা জানিয়েছেন। খালেদা জিয়ার জলপাইগুড়ির প্রতিবেশী সুহৃদ মণ্ডল বলেন, “খালেদা জিয়ার আত্মীয়রা প্রায়ই তার জন্মভিটা দেখতে জলপাইগুড়ি আসতেন। তারা সবাই আমার বাড়িতেই থাকতেন। মাত্র কয়েক মাস আগে তার এক ভাইঝি খালেদা জিয়ার জন্মস্থান দেখতে এসেছিলেন। আমরা প্রায়ই আলোচনা করতাম দেশটা যদি ভাগ না হতো তবে কতই না ভালো হতো।”
তিনি আরো বলেন, “যদিও আমি খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে দেখিনি, তবুও আমি তার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করি। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি আমরাও শোকাহত।”
সুনীতিবালা সদর গার্লস স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক অরূপ দে বলেন, “আমি জানতে পেরেছি খালেদা এখানকার ছাত্রী ছিলেন। স্কুল খুললে আমরা একটি শোকসভার আয়োজন করার পরিকল্পনা করছি।”