অর্থনীতি

সিনহা সিকিউরিটিজের সার্বিক কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসি

পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর ৬৭) বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে আগামী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজটির প্রকৃত নিট সম্পদ, গ্রাহকদের পাওনা এবং গ্রাহকদের সিকিউরিটিজ সংরক্ষণের অবস্থা যাচাই করতেই এ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের অধীন ইন্সপেকশন, এনকোয়ারি অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (আইইআইডি) থেকে এ সংক্রান্ত একটি তদন্তের আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 

বিএসইসির জারি করা তদন্তের আদেশ সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে। 

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক অনু দে ও সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বিএসইসি মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। এ কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ব্রোকারেজ হাউজটির বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির দুজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের নিট সম্পদের প্রকৃত অবস্থা কি- খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া গ্রাহকদের কাছে ব্রোকারেজ হাউজটির পরিশোধযোগ্য অর্থ আছে কিনা যাচাই করে দখা হবে। এ ছাড়া গ্রাহকদের সিকিউরিটিজ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে কিনা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা ও গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিএসইসি নজরদারি জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন ট্রেক হোল্ডারের বিরুদ্ধে নিয়মিত পরিদর্শন, অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গ্রাহকদের সিকিউরিটিজ ও অর্থ যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। অতীতে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কমিশন কঠোর অবস্থান নেয়। সিনহা সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রেও কমিশন সতর্কতামূলক ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রোকারেজ হাউজটির সার্বিক কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা, খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”

প্রসঙ্গত, সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে (সিসিএ অ্যাকাউন্ট) ঘটতি ছিল ৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এ ঘটতি পূরণ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার সময় দেয় বিএসইসি। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রোকারেজ হাউজটির পরিচালনা পর্ষদ সেই ঘাটতি পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯২১তম কমিশন সভায় সিনহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওদের ব্যাংক ও বিও হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

এরই ধরাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেয় বিএসইসি। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইওর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের জন্য পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানায় কমিশন।