গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ। এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নিয়ে গঠিত নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরুর পর বছরজুড়ে নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দলটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটির তরুণ নেতৃত্ব নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্র সংস্কার এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। বছরজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে এনসিপির অবস্থান, কর্মসূচি ও নেতৃত্বের ভূমিকা দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করেছে, যা শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির আত্মপ্রকাশ ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। জুলাই আন্দোলনে শহীদ মো. ইসমাইল হাসান রাব্বির বোন মিম আক্তার দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন।
এর পর ২ মার্চ (রবিবার) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এক বার্তায় ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনের কথা জানান।
ওই বার্তায় তিনি বলেন, “২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে বাংলাদেশের নাগরিকরা মুক্ত হয়েছে। তবে, শহীদ মিনারে ঘোষিত অভ্যুত্থানের এক দফা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে এই জনপদের মানুষ ইতিহাসের নানান সময়ে নিজেদের হাজির করেছে। প্রায় ২০০ বছরের উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা ১৯৪৭ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করি। কিন্তু, পাকিস্তান রাষ্ট্র এই জনপদের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষকে ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
আখতার হোসেন আরো বলেন, “মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকে এই জনপদের মানুষ ১৯৭১ সালে একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে প্রণীত মুজিববাদী সংবিধানের মধ্যে দিয়ে নির্মিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দিয়েছে। এর ফলে এ দেশের নাগরিকরা ইতিহাসের বিভিন্ন পরিক্রমায় বাকশাল, স্বৈরতন্ত্র এবং সর্বশেষ ফ্যাসিবাদের শিকার হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদের সব উপাদান ও কাঠামোকে বিলোপ করতে এবং এ জনপদের মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আমরা, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা, ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেছি।”
এর পর ৪ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং রায়েরবাজারে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুরু করে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
দলের নিবন্ধন ও প্রতীকের জন্য আন্দোলন জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশের পর থেকেই নিবন্ধন ও ‘শাপলা’ প্রতীকের জন্য আন্দোলন শুরু করে নতুন এ রাজনৈতিক দলটি।
এনসিপি গত ২২ জুন ইসিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন জমা দেয় এবং নির্বাচন কমিশনকে তাদের পছন্দের ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দের অনুরোধ জানায়। আবেদনপত্রে শাপলার পাশাপাশি ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীকও বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছিল। তবে, ৯ জুলাই নির্বাচন কমিশন একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে ‘শাপলাকে প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দেয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, এটি দেশের জাতীয় প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এবং তা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়।
এর পরেই এনসিপির নেতাকর্মীরা ইসির কাছে বারবার তাদের দাবির পক্ষে লিখিত চিঠি ও বৈঠকের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যান। ২২ সেপ্টেম্বর এনসিপির প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে আবারও শাপলা প্রতীক দেওয়ার দাবি জানান।
গত ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছ থেকে দলের নিবন্ধন সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সিইসির সঙ্গে আজকের বৈঠক ছিল মূলত কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়ে, সেটি আমরা গ্রহণ করেছি। এনসিপি নিবন্ধিত দল হিসেবে এখন থেকে কাজ করবে। এই নিবন্ধন সার্টিফিকেটের সঙ্গে আমাদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে প্রতীক পেয়েছি ‘শাপলা কলি’। এই শাপলা কলি প্রতীকে এবার এনসিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে, গ্রাম বাংলার মানুষের প্রতীক হিসেবে শাপলা কলি এবার নির্বাচনে থাকবে। নিবন্ধনের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ইসি ও এনসিপির শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
নিউইয়র্কে সদস্য সচিবের ওপর ডিম নিক্ষেপ, ঢাকার রাজনীতিতে সমালোচনা গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা। তারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যান। বিমানবন্দর থেকে বের হওযার সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের গায়ে ডিম নিক্ষেপ এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাকে হেনস্থা করা হয়। কটূক্তি ও অশালীন ভাষায় তাদের ওপর আক্রমণও করা হয়।
নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাকে হেনস্থার ঘটনায় তখন দেশের রাজনীতির ময়দান যেমন উত্তপ্ত হয়, তেমনই এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারসহ ফ্যাসিস্ট শক্তি দমনে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।
আখতার ও জারার ওপর হামলা এবং ডিম নিক্ষেপের ঘটনার দিনেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এনসিপি। সমাবেশগুলোতে এনসিপির নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হওয়া রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই হামলায় জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করে দল হিসেবে অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজপথে এনসিপি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে বছরজুড়েই আন্দোলনে সরব ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত ও আহতদের আত্মত্যাগের স্বপ্নকে ধারণ করে প্রণীত এই সনদকে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক ইতিহাসের ‘ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে অভিহিত করেছে দলটি। জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান ছিল মিশ্র।
১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধানত আইনি কাঠামোর অভাব এবং বাস্তবায়নের অস্পষ্টতার কারণে সই করেনি। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সুনির্দিষ্ট আইনি ভিত্তি ছাড়া এই সনদ স্বাক্ষর করা হবে কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা।
এক অনুষ্ঠানে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সনদটির কোনো আইনি ভিত্তি বা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া এতে স্বাক্ষর করা অর্থহীন এবং এটি কেবল একটি রাজনৈতিক প্রচারণায় পরিণত হতে পারে।
এনসিপির দাবি ছিল—সনদ বাস্তবায়নের খসড়া আদেশ জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে, গণভোটের প্রশ্নগুলো আগেই চূড়ান্ত করতে হবে এবং প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে আইনি আদেশ জারি করতে হবে। এই শর্তগুলো পূরণ না হওয়ায় তারা স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকেন।
এনসিপি মনে করে, সনদটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে বা ভবিষ্যৎ সরকার এটি মেনে চলতে বাধ্য কি না, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট রূপরেখা বা গ্যারান্টি ছিল না। অনেক ছোট দল এই সনদকে সমর্থন দিলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ এবং ‘সংবিধান পরিবর্তন’ নিয়ে দলটির তীব্র মতবিরোধ দেখা দেয়। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরনো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়া মানেই শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা।
৬৪ জেলায় গণসংযোগ ও পদযাত্রা এনসিপি জুলাই মাস জুড়ে দেশের ৬৪ জেলায় গণসংযোগ ও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। রাজনীতিতে জনসম্পৃক্ততা জোরদার করা, দলীয় কর্মসূচিকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছেনো এবং সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে সাধারণ মানুষে গিয়ে সরাসরি মতামত সংগ্রহ করে দলটি।
২০২৫ সালের শুরু থেকেই এনসিপি রাজধানীকেন্দ্রিক রাজনীতির বৃত্ত ভেঙে তৃণমূলমুখী হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মীসভা, পথসভা এবং পদযাত্রা করে। দলটির শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম পৃথক পৃথক টিমে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা সফর করেন।
সারা দেশের পদযাত্রাগুলোতে তরুণ ও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা গেছে। বিশেষ করে, উত্তরবঙ্গ ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে এনসিপির পদযাত্রাগুলো বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
৬৪ জেলায় এ কর্মসূচিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার এবং আহতদের। প্রতিটি জেলায় পদযাত্রা শেষে দলের নেতারা শহীদদের কবর জিয়ারত করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতাকে কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হতে দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে নেতৃত্বে এনসিপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় এনসিপি। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতান্ত্রিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে রাজপথে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে দলটি।
এনসিপির অভিযোগ—দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে গণতন্ত্র ধ্বংস, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটাধিকার হরণ এবং বিরোধী মত দমন করেছে। এর ফলে দলটি বাংলাদেশে রাজনীতি করার বৈধতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ মে রাতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য’র ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আন্দোলন পরবর্তীতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্ত আসার পর আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে।
১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রথম ধাপে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
১০ ডিসেম্বর রাজধানীর বাংলা মোটরে এনসিপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ১২৫ আসনে প্রার্থীর তালিকায় উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন— নাহিদ ইসলাম: ঢাকা-১১, আখতার হোসেন: রংপুর-৪, সারজিস আলম: পঞ্চগড়-১, হাসনাত আবদুল্লাহ: কুমিল্লা-৪, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী: ঢাকা-১৮, সারোয়ার তুষার: নরসিংদী-২, আব্দুল হান্নান মাসউদ: নোয়াখালী-৬, ডা. মাহমুদা আলম মিতু: ঝালকাঠি-১, নাহিদা সারওয়ার নিভা: ঢাকা-১২, আরিফুল ইসলাম আদীব: ঢাকা-১৬।
এনসিপির নেতৃত্বে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং এবি পার্টি নিয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হয় গত ৭ ডিসেম্বর। এই জোটের মুখপাত্র করা হয় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে।
জোটের ঘোষণা দিয়ে তখন নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, “চব্বিশের পরে গত দেড় বছরে আমাদের অনেক জায়গায় হতাশা রয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নানা শক্তি নানাভাবে সংস্কারের বিরোধিতা করেছে এবং বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। এ অবস্থায় সংস্কারের পক্ষে আমরা তিন দল আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই ঐক্য প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।”
এনসিপির আহ্বায়ক আরো বলেন, “এটা কেবল নির্বাচনি জোট না, এটা রাজনীতিক জোটও। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করব। আরো অনেকগুলো রাজনৈতিক শক্তি ও দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আগামী নির্বাচনে আমরা একসঙ্গে, এক মার্কায় নির্বাচন করব।”
জামায়াতের সঙ্গে জোট করার খবরে এনসিপি থেকে পদত্যাগের হিড়িক
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি জোট গঠনের খবরে তীব্র অস্থিরতা ও অসন্তোষ দেখা দেয় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভেতরে। এ নিয়ে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যেই হঠাৎ করে শুরু হয় পদত্যাগের ঢল। শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে দল ছাড়ার ঘোষণা দেন। দলটির আদর্শিক অবস্থান ও প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণার সঙ্গে এ ধরনের জোট সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক, এমন অভিযোগ তুলে অনেকেই এনসিপির বর্তমান নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ বলে আখ্যা দেন।
২৭ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পদত্যাগ করে তিনি এনসিপির দলীয় গ্রুপে লিখেন, “প্রিয় সহযোদ্ধাগণ, আমি দল থেকে পদত্যাগ করেছি। গত দেড় বছরে আপনাদের থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সেজন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো।”
২৮ ডিসেম্বর দুপুরে ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীন। অবিশ্বাস আর অনাস্থার কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন বলে জানান।
এর আগে ২৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজনৈতিক জোট বা আসন সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিদেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ সদস্য।