সাতসতেরো

শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা

শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে; কারণ পরিবারই শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সে ভালোবাসা, নিরাপত্তা, সামাজিকতা ও মৌলিক আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। বাবা-মা প্রথম শিক্ষক হিসেবে শিশুর আত্মবিশ্বাস তৈরি ও আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপন করেন; যা একটি শিশুর সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ মানসিক বিকাশের জন্য আবশ্যক। একটি সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ শিশুকে আত্নবিশ্বাস, সহানুভূতি ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে, যা তার পরবর্তী জীবনে সামাজিক ও মানসিক সুস্থতার চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।

শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের নিম্নলিখিত ভূমিকা প্রভাবিত করে নিরাপত্তা ও আবেগিক সমর্থন: শিশুর জন্য পরিবার একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে ভয়-রাগ, আন্দন-দুঃখ ইত্যাদি আবেগ প্রকাশ করতে পারে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণের কৌশল শেখে

সামাজিকীকরণের ভিত্তি: শিশুরা পরিবারে পরস্পারিক সম্পর্কের মাধ্যমে শেখে কীভাবে অন্যদের সঙ্গে মিশতে হয়, বন্ধুত করতে হয় এবং সম্পর্ক তৈরি করতে হয় ও তা টিকিয়ে রাখতে হয়। এসব প্রভাবক তাদের সামাজিক বিকাশের ভিত্তি। অবশ্য সেই সুযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তৈরি হয় যৌথ পরিবারে মানবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, বর্তমানে একক পরিবারে বেড়ে ওঠায় অনেক শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

জ্ঞানগত বিকাশ: যৌথ পরিবারের সদস্য- বিশেষ করে দাদা-দাদি, ফুফু ও চাচা- এমন পরিবারিক সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা, তাদের কাছ থেকে গল্প শোনা ও তাদেরকে গল্প শোনানোর অভ্যাস শিশুর ভাষাজ্ঞান যেমন সমৃদ্ধ করে তেমনি তাদের চিন্তার প্রসার ঘটায়। একক পরিবারে এই সুযোগ কম হওয়ায় শিশু তার কাঙ্ক্ষিত মনোজাগতিক বিকাশ ঘটাতে বাধাগ্রস্ত হয়। 

আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: পরিবার যখন শিশুকে তার কাজের প্রসংসা করে এবং তার মতামতকে গুরুপ্ত দেয়, তখন তার মধ্যে আত্নবিশ্বাস গড়ে ওঠে। পরিবারে এই চর্চা অব্যাহত থাকলে শিশুর বৃত্তিবৃত্তিক বিকাশের পথ খুলে যায়; সে নতুন নতুন চিন্তা করতে পছন্দ করে। এতে করে শিশুর অনুসন্ধানী মন তৈরি হয়। 

তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার: বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। পরিবারকে নিশ্চত করতে হবে, যেন তথ্যপ্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে শিশুর বাস্তব জ্ঞান অর্জন বাধাগ্রস্থ না হয়। পরিবারে একসঙ্গে বসে কথা বলা, খেলাধুলার যথেষ্ট সুযোগ থাকা এবং মাঝে মাঝে পর্যটনে নিয়ে যাওয়া শিশুদের মানসিক বিকাশে বড় প্রভাবক হয়ে কাজ করে। 

পরিশেষে একটি ইতিবাচক, সহযোগিতামূলক ও সহায়ক পারিবারিক পরিবেশ শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য, যা তাকে একজন আত্মবিশ্বাসী, সামাজিক, নৈতিক ও মানসিকভাবে সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।

 

লেখক: মোঃ বাবুল আখতার, সিনিয়র ইংরেজি শিক্ষক, মহাকাল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অভয়নগর, যশোর।