আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে শিশুগাছ। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় ৩০ বছর আগে রাস্তার দুইপাশে লাগানো হয়েছিলো ২ কোটি শিশুগাছ। তার মধ্যে ৮০ শতাংশ মারা গেছে অনেক আগেই। বাকি ২০ শতাংশ গাছও এখন মৃত্যুর পথে। মৃত্যুর হুমকিতে থাকা শিশু গাছের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি।
জেলা বনবিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।
বনবিভাগ জানায়, নব্বই দশকের শুরুর দিকে সড়ক, বাঁধ, খালের পাড় ও চরাঞ্চলে বৃক্ষ রোপণ করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সাড়ে তিন লাখ মানুষ। গাছ বড় হলে ৬০ ভাগ পাবেন গাছ রোপণকারীরা। বাকি অংশ পাবে সরকার।
বনায়নের ৫০ ভাগ বৃক্ষই ছিলো শিশুগাছ। শিশু গাছের অধিকাংশ মরে যাওয়ায় রোপণকারীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে সামাজিক বনায়নের গতি মন্থর হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া-ধোয়াইল সড়কে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে মেহগনি, কড়াই, গামারি, বাবলাসহ রকমারি গাছের সারি। সব গাছই সতেজ ও সুদীর্ঘ। সতেজ গাছের বাইরে শুধু শিশুগাছই শুকিয়ে বিবর্ণ। অথচ একসময় এই গাছগুলোই ছিল সড়কের সবচেয়ে দর্শনীয়। যেমন ছিল প্রস্থ, তেমনি তার দৈর্ঘ্য। কিন্তু সে দৃশ্য এখন অতীত। ধোয়াইল-বালিদিয়া সড়কের মতো মহম্মদপুরের নহাটা-রাজাপুর, বিনোদপুর-নহাটা, মাগুরা-শত্রুজিতপুর, সদর উপজেলার ভায়না-আরমখালী, শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া-আঠারোখাদা, শালিখা উপজেলার আড়পাড়া-কালীগঞ্জসহ সব সড়কের দুই পাশে থাকা শিশুগাছগুলো মরে গেছে।
শিশুগাছ মরে যাওয়া নিয়ে কথা তুলতেই ধোয়াইলের শিক্ষক ওয়ালিউর রহমানসহ এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত ৩০ বছর ধরে তারা রাস্তার পাশে থাকা শিশুগাছগুলোর মরে যাওয়া দেখছেন। গাছ থেকে প্রথমে বের হয় এক ধরনের আঠালো পদার্থ। দেখা যায়, মরে যাওয়ায় কয়েকটি গাছ শুকনো কাঠসর্বস্ব দেহাবশেষ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জেলা বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার মিত্র জানান, ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি মাগুরার ফরেস্ট রেঞ্জার ছিলেন। তখন সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় জেলার বিভিন্ন সড়কে অন্তত দুই কোটি শিশুগাছ লাগানো হয়। গত কয়েক বছরে গাছগুলো মারা গেছে। এর আগে ও পরে আরো কয়েক লাখ গাছ একইভাবে লাগানো হয়েছিল। যেগুলোর অবস্থাও একই রকম। ২০০৫ সালের পর থেকে এই গাছ রোপণ বন্ধ রয়েছে।’
শ্যামল কুমার মিত্র জানান, ‘কী রোগে গাছগুলো মারা যাচ্ছে, তা নির্ণয় করা যায়নি। বিদেশি প্রজাতির গাছ বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই নয়। জলবায়ুর পরির্তনের কারণেও শিশু গাছ মারা যেতে পারে।’
মাগুরার শালিকার আড়পাড়া এলাকার সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘৭৫০ জন সুবিধাভোগী আড়াই কিলোমিটার সড়কের দই পাশে নানা জাতের বনজ বৃক্ষরোপণ করেন। এরমধ্যে শিশু গাছের সংখ্যাই ছিল বেশি। গাছ কাটার আগ মুহূর্তেই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে সব গাছ মারা যায়। ’
প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কর্মরত সেচ্ছাসেবী সংস্থা পল্লী প্রকৃতির নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘এটি অজ্ঞাত ছত্রাক কিংবা ফাঙ্গাসের আক্রমণে মারা যাচ্ছে। এর উৎপত্তিস্থল শেকড়ে। পরে গোটা গাছে ছড়িয়ে পড়ে।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘রোগের ধরন দেখে ধারণা করা যায়, এটি ডাইব্যাক জাতীয় ভাইরাস কিংবা অন্য কোনো ফাঙ্গাসের আক্রমণ।’
রাইজিংবিডি ডট কম/মাগুরা/১৫ নভেম্বর ২০১৪/আনোয়ার হোসেন শাহীন/রাজু