আবুল কাশেম চৌধুরীঢাকা, ১৪ জুলাই : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা না হওয়ায় চট্টগ্রামবাসী বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা প্রকার বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বলা যায়, যথার্থ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত চট্টগ্রামবাসী।বর্তমানে বাংলাদেশে ৭টি বিভাগে ৬৪টি জেলা । স্বাধীনতা পূর্বকালে তদানিন্তন পুর্বপাকিস্তানে ১৯টি জেলা ও ৪টি বিভাগ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৫ এর ৪ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু প্রণীত জাতির মুক্তি সনদ বা.ক.শা.ল কর্মসুচি বাস্তবায়নের লক্ষে দেশের সকল মহকুমাকে জেলায় পরিনত করে ৬১ জেলা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া একটি জেলা ঘোষিত হয়েছিল। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হয় এবং তাঁর প্রণীত সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাজনৈতিক কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে সকল মুহকুমা জেলা হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তথা পটিয়া জেলা হল না। পটিয়া ১৯১২ সাল থেকে একটি সমৃদ্ধ মহকুমা। তখনকার আমলে শিক্ষা-দিক্ষায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান ছিল। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে কুপোকাত হল চট্রগ্রাম দক্ষিণ জেলা তথা পটিয়া মহকুমাবাসী। সে মহকুমা বর্তমানে উপজেলা। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন জেলা ভাগ হয়ে কয়েকটি জেলা হলেও চট্টগ্রামে তা হয়নি। তবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে আলাদা জেলা হয়েছে কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা। তাতে চট্টগ্রামের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। তা ছাড়া রাঙ্গুনীয়াও একটি মহকুমা ছিল তাও বিবেচনায় আনা হয়নি।বাংলাদেশের সকল বৃহত্তর জেলা ভেঙ্গে কয়েকটি জেলায় পরিনত হয়েছে। সে সব জেলার অধিবাসীরা সরকারী সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে কিন্তু চট্টগ্রামবাসিরা সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছে। সরকারী চাকরীতে জেলা কোটা বিদ্যমান। জেলা কোটার কথা বলতে গেলে চট্রগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ পুর্ব পশ্চিম সব মিলে এক। অপরদিকে যেমন রাজশাহী ঃ রাজশাহী, নওগাঁ, চাপাইসহ কয়েকটি জেলা- আর সে সব জেলার অধিবাসিরা সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। উন্নয়নের বেলায়ও বৈষম্য। বাজেট বরাদ্দ করতে গিয়ে চট্টগ্রাম এক জেলার সমপরিমান অর্থ বরাদ্দ পেয়ে থাকে। অন্যদিকে নোয়াখালী জেলা পায় ৩ (তিন) জেলার বরাদ্দ। কুমিল্লা ভেঙ্গে ৩ (তিন) জেলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে বিবেচনা করে অবিলম্বে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। চট্রগ্রাম এর উন্নয়নের প্রয়োজনেই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বাস্তবায়ন অপরিহার্য।লক্ষ্যনীয় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুচনা চট্টগ্রাম থেকে, মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাকাগার চট্টগ্রাম। মরহুম জহুর আহাম্মদ চেীধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছিলেন। প্রথমে হান্নান পরে মেজর জিয়া চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছর পার হতে চললেও চট্রগ্রামের তেমন উন্নয়ন হয়নি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণে একটি নতুন থানা হয়েছে যার নাম কর্ণফুলি। এই থানা সরাসরি চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কর্ণফুলি থানা এলাকা শিল্প নগরী হিসাবে গড়ে ওঠছে।
ইতোমধ্যে ইপিজেডসহ বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় হতে চলেছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বাস্তবায়ন করা হলে অর্থনীতির চাকা আরও সচ্ছল হবে আরও উন্নত হবে- কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে প্রচুর এতে কোন সন্দেহ নেই। বৃহত্তর চট্টগ্রামের দক্ষিণ এলাকাও ছোট নয়। চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু পার হলে শুরু হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ এলাকা।
সেতুর পর কর্ণফুলি, আনোয়ারা, বাশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগারা, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী থানা নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। নতুন জেলা প্রতিষ্ঠা লাভ করলে ঐ অঞ্চলের উন্নয়ন তরান্বিত হবে। অন্য দিকে চট্টগ্রাম উত্তরও কম বড় নয়। উত্তরে রাউজান, রাঙ্গুনীয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, মিরাশরাই, সীতাকুন্ড থানা অবস্থিত।
ধরা যাক সরকারী চাকরীর চট্টগ্রামের কোটা বলতে উত্তর ও দক্ষিণকে বুঝায় এতে উত্তরের হাটহাজারী, রাউজান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত তেমন দক্ষিণের সাতকানিয়া, বাঁশখালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে সব দিক বিবেচনা করলে এবং উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বাস্তবায়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। আবুল কাশেম চৌধুরী : সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি রক্ষা সংসদ,কেন্দ্রীয় কমিটি
রাইজিংবিডি/শামটি