শিল্প ও সাহিত্য

নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে...

লিমন আহমেদঢাকা, ১৯ জুলাই: ‘মেয়েদের একটা স্বভাব হচ্ছে,একবার কোনো কারণে যদি তারা মুগ্ধ হয়ে যায় তাহলে তারা মুগ্ধ হতেই থাকে।

এখন আমি যদি এই মহিলার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করি, তিনি সেই আচরণেরও সুন্দর ব্যাখ্যা বের করবেন এবং আবারো মুগ্ধ হবেন।

ছেলেদের ভেতর এই আচরণ দেখা যায় না। তারা মুগ্ধ হতে চায় না। কোনো কারণে মুগ্ধ হয়ে গেলে প্রাণপণ চেষ্টা করে মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠতে।’

লেখক হুমায়ূন আহমেদ ‘আজ হিমুর বিয়ে’ উপন্যাসে হিমুর মুখে এই কথাই প্রকাশ করেছিলেন। তবে কি তাই ঘটেছে ব্যাক্তি হুমায়ূনের জীবনে!

নয়তো সব কিছুতেই মুগ্ধ হওয়া ছিল যার অভ্যেস সেই মানুষ কেন হঠাৎ করে হারিয়ে গেলেন!

হারিয়ে যাবার মত সময় কি তার পেরিয়ে গিয়েছিল? তবুও চলে যাওয়ার মানে কি এই-কোন কারণে পৃথিবীর প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাওয়া হুমায়ূন প্রাণপণ চেষ্টা করে মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠেছেন? চলে গেছেন প্রিয় মানুষ, জোছনা, শ্রাবন মেঘের দিন কিংবা লিলুয়া বাতাসের অপূর্ব পৃথিবী ছেড়ে।

আজ ১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের বাদশা হুমায়ূনের প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। গত বছরের এই দিনটিতে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন অন্যলোকের দেশে।

জন্ম ও পরিবার

হুমায়ূন আহমেদ। সাহিত্যাঙ্গনে কীংবদন্তী এক নাম। জন্মেছিলেন ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন।

তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের_মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন।

তাঁর বাবা লেখালিখি করতেন ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করতেন। বগুড়া থাকার সময় তিনি একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন। গ্রন্থের নাম দ্বীপ নেভা যার ঘরে।

তাঁর অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক এবং কথাসাহিত্যিক; সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট। হুমায়ুন আহমেদের ৩ ছোট বোন শিকু, শিফু ও মনি।

ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান। ডাকনাম কাজল। তাঁর পিতা নিজের নাম ফয়জুর রহমানের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি নিজেই নাম পরিবর্তন করে ‌হুমায়ূন আহমেদ রাখেন।

ছাত্র হুমায়ূন

বাবার চাকুরী সূত্রে নেত্রকোণা, দিনাজপুর, বগুড়া, সিলেট, পঞ্চগড়, রাঙামাটি, বরিশালে তার শৈষব কেটেছে। সেই সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই বিজ্ঞানে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

হুমায়ূন আহমেদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে তার ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন। এমএসসি শেষে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন।

অধ্যাপক

কর্মে প্রবেশ করেন ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় একসময় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি৷

স্বামী ও বাবা হুমায়ূন

১৯৭৩ সালে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। হুমায়ূন আহমেদের প্রথমা স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অন্য আরেকটি ছেলে অকালে মারা যায়।

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৫-এ গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই শাওনকে বিয়ে করেন।

এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।

আমাদের হুমায়ুন আহমেদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের ছাত্র জীবনে সাহিত্যে যাত্রা শুরু করেন ‘নন্দিত নরকে’ উপণ্যাসের মাধ্যমে। শঙ্খনীল কারাগার তাঁর ২য় গ্রন্থ। তারপর থেকে যেখানেই হাত দিয়েছেন হুমায়ূন সেখানেই সোনা ফলেছে।

সময়ের অববাহিকায় দীর্ঘদিনের সাহিত্য জীবনে তিনি রচনা করেছেন প্রায় তিনশ’র মত উপন্যাস। যা বিশ্ব সাহিত্যে একজন লেখক হিসেবে তাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা।

তার রচনাসমগ্রের মধ্যে এইসব দিনরাত্রি, জোছনা ও জননীর গল্প, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথাও, সৌরভ, নি, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরীপুর জাংশান, বহুব্রীহি, আশাবরি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, আমার আছে জল, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, মেঘ বলেছে যাবো যাবো, মাতাল হাওয়া, শুভ্র গেছে বনে, বাদশাহ নামদার, এপিটাফ, রূপা, আমরা কেউ বাসায় নেই, মেঘের ওপারে বাড়ি, আজ চিত্রার বিয়ে, এই মেঘ, রৌদ্রছায়া, তিথির নীল তোয়ালে, জলপদ্ম, আয়নাঘর, হুমায়ূন আহমেদের হাতে ৫টি নীলপদ্ম ইত্যাদি অন্যতম।

বাংলা সাহিত্যের নতুন যুগের স্রষ্টা ছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যকে সার্বজনীন করে তুলতে এই কিংবদন্তি কথাশিল্পীর অবদান ইতিহাস হয়ে থাকবে। শুধু সাহিত্যেই নয়, তার নাটক ও সিনেমায় তিনি এমন কিছু চরিত্র নির্মাণ করেছেন যেগুলো আশ্চর্য রকম জীবন্ত।

হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা বিচিত্র সব চরিত্র অগুনতি মানুষকে হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, স্বপ্নে ভাসিয়েছে। এক একটি চরিত্র পাঠক-দর্শকদের কাছে একেকটি নতুন আবিষ্কার।

সাহিত্যের চরিত্রগুলোই বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে তার নাটক-সিনেমায়। হুমায়ূনের গড়া এসব চরিত্রে কখনো কখনো তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের প্রতিরূপ।

হুমায়ূন আহমেদের মধ্যে আমরা তাই খুঁজে পাই কখনো হিমু, কখনো বা মিসির আলী, আবার কখনো কখনো শুভ্র। তার তৈরি করা চরিত্রের জনপ্রিয়তা ব্যক্তি হুমায়ূনকেও কখনো কখনো যেন ছাড়িয়ে গেছে।

এছাড়াও বাকের ভাই, মুনা, মাজেদা খালা, লীলাবতী, রূপা, কঙ্কা চরিত্ররাও তাকে যুগে যুগে অমর করে রাখবে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের অন্তরে।

বাকের ভাইয়ের স্রষ্টা!

হুমায়ূন আহমেদ কিংবদন্তী হয়ে আছেন বাংলাদেশের টিভি নাটকের জগতেও। ১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা শুরু করেন তিনি। উনিশ’শ আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের নাটকগুলো এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে তার সৃষ্টি করা চরিত্রদের বিপদে রাস্তায় নেমে আসত মানুষ।

কোথাও কেউ নেই’, নাটকে বাকের ভাইকে ফাঁসি না দেয়ার জন্যে লেখকের বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন দর্শকরা। দর্শকেদের মিছিল বের হয়েছিল। কথা শোনেন নি বাকের ভাইয়ের প্রানদাতা হুমায়ুন। বড্ড বেরসিক (!) ছিলেন।

তার অন্যতম নাটকগুলোর মধ্যে এইসব দিন রাত্রি, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, অয়োময়, আজ রবিবার, তারা তিনজন, আমরা তিনজন, মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম, জল তরঙ্গ, ইবলিশ উল্লেখযোগ্য।

চলচ্চিত্রের জাদুকর

একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবেও হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় এক নাম। হুমায়ূন আহমেদে মৃত্যতে শোক প্রকাশ করে স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন,‘সব গুণী মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছে।

হুমায়ূনকে হারিয়ে অনুভব করছি, আপনজন হারানোর বেদনা। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের জন্য আমরা যারা কাজ করে আসছি, হূমায়ূন আহমেদ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি মানুষকে হলমুখী করেছিলেন।’

মুলত তার চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ তৈরি হয় নব্বুই দশকের প্রথম দিকে। এই আগ্রহ আর সীমাহীন স্বপ্ন ছিল জীবনের শেষভাগেও। মোট ৮টি ছবি নির্মাণ করে গেছেন তিনি। ৮টি ছবি হলো-আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত , আমার আছে জল আর ঘেটুপুত্র কমলা।

সম্মানীত মানুষ

দীর্ঘদিনের সাহিত্য জীবনে একজন লেখক হিসেবে প্রায় সবই তিনি অর্জন কিংবা জয় করে নিয়েছিলেন। পাঠক, ভক্ত, সম্মান, টাকা-সব কিছুই তিনি পেয়েছিলেন দু’হাত ভরে। আর স্বীকৃতিস্বরুপ নানা সময়ে ঘরে উঠেছে নানা পুরস্কার।

তার মধ্যে রয়েছে সাহিত্যে-বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক,     লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসুদন পদক, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার,     জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক, এবং চলচ্চিত্রে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪), বাচশাস পুরস্কার ইত্যাদি।

আমারে ছাড়িয়া রে বন্ধু কই গেলা রে...

মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন মলাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। আরোগ্যের আশায় দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ জুলাই, বৃহস্পতিবার ২০১২ তারিখে স্থানীয় সময় ১১:২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ।

এর পুর্বে ১২ দফায় তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তিনি দ্রুত অবনতির দিকে যান।

কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে ইন্তেকাল করেন হুমায়ূন আহমেদ।

তুমি রবে নীরবে

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদের  মরদেহ ২৩ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। আগেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট লেখকের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে জনস্রোত শৃংখলা বজায় রাখার উদ্দেশে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। হুমায়ূনকে শ্রদ্ধা জানাতে গণমানুষের ভীড়ে সেদিন অপেক্ষায় ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তারকারাও।

সবার চোখে জল, হাতে ফুল। সবার চোখে মুখে আপনজন হারানোর গাঢ় বেদনা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্ত-অনুরাগীদের পাশাপাশি তারকাদের ভিড় বাড়তেই থাকে। এরই মধ্যে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়, আবার ওঠে রোদ । ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে হুমায়ূনের কফিন।

অবশেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার নিজের হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে। সেখানে লিচু গাছের নিচে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। চলে গেছেন কিংবদন্তী।

আজ কিংবদন্তীর স্মৃতিরা পড়ে আছে এখানে-ওখানে বেদনার রঙ ছড়িয়ে।

শেষকথা

হুমায়ূন ভালবাসতেন, ভালবাসাতে জানতেন। তার প্রমাণ তার মৃত্যু। বাংলা সাহিত্যে আর কোন লেখকের মৃত্যু এভাবে শোকাহত করেনি বাংলা সাহিত্যের পাঠককে। কোন লেখকের জন্য এত শোঁক মিছিল আর কোনদিন দেখেনি বাঙ্গালি জাতি।

তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের যে ঢল নেমেছিল তা হয়ত ইতিহাস হয়েই থাকবে। ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে, শহর-গ্রামে, ছাত্র-শিক্ষক, সরকার, রাষ্ট্র-সবাই শোকে কাতর হয়েছে এই মহান লেখকের প্রয়াণে।

এখানেই লেখক হূমায়ুনের জয়। তিনি তার লেখনীকে করে তুলতে পেরেছিলেন সর্বজনীন, তাই সমাদৃতও হয়েছেন সর্বত্র।

সাহিত্যের আড়ালে হুমায়ূন আহমেদ খুব হালকা ভাষায় বলে যেতেন মানবজীবনের চরম বাস্তবতার কথা। তেমনি এক লেখায় বলেছিলেন- ‘তুমি হাসলে সবাই তোমার সাথে হাসবে, কিন্তু তুমি কাঁদলে কেউ তোমার সাথে কাঁদবে না। মানুষকে কাঁদতে হয় একা একা।’

তার কথার সূত্রেই জানতে ইচ্ছে করে, কত মানুষ তার বিরহে আজ একা একা কাঁদে সে কথা কি আমাদের প্রিয় হুমায়ূন স্যার জানেন কিংবা দেখতে পান?

 

রাইজিংবিডি/এলএ