অন্য দুনিয়া

পরকীয়ায় মজে মায়ের সংসার বদল, বিপাকে অবুঝ মেয়ে

নরসিংদী প্রতিনিধি : পরকীয়ায় মজে মা ছেড়েছেন বাবাকে। এ অবস্থায় তাদের একমাত্র সন্তান ৬ বছরের মেয়ের জীবন হয়ে উঠেছে যন্ত্রণাময়। মায়ের স্বামী বদলের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের জীবনে নেমে এসেছে এক জঘন্য টানা-হেঁচড়ার খড়্গ। আর এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে অবুঝ মেয়ে সামিয়া তাজবি তুলি। অঙ্কুরেই ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হচ্ছে এই অবুঝ শিশুটির জীবন।  কারণ, তুলির মা মনিরা আক্তার স্বামী বদলের পর থেকে কখনো মেয়েকে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কখনো ফেরত দিচ্ছেন। এভাবে টানা-হেঁচড়ায় তুলি গুলিয়ে ফেলেছে জীবনের ছন্দ। এসব আপদে তুলির মায়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে তুলির নানিও। জানা যায়, মনোহরদীর কাচিকাটা ইউনিয়নের মাধুশাল গ্রামের ছোবান মিয়ার ছেলে হারুন অর রশিদের সঙ্গে ২০০৭ সালের ২৪ আগস্ট বিয়ে হয় একই উপজেলার বড় মির্জাপুর গ্রামের কফিল উদ্দিন ওরফে মজনুর মেয়ে মনিরা আক্তারের। দাম্পত্য জীবনে এক বছরের মাথায় ২০০৮ সালের মার্চে এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। এই কন্যাই হচ্ছে সামিয়া তাজবি তুলি।এরই মধ্যে জীবিকার তাগিদে কুয়েতে চাকরি নিয়ে চলে যায় হারুন অর রশিদ। উপার্জিত অর্থ পাঠাতে থাকে স্ত্রী মনিরার কাছে। এ সময় চতুর মনিরা ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের কাজে যোগ দেন। এ থেকে পরিচয় হয় কাপাসিয়া উপজেলার সুলতানপুর টুক গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোশারফের সঙ্গে। এ পরিচয় থেকে একপর্যায়ে তা পরকীয়ায় গড়ায়। প্রবাসে হারুন এ খবর জানতে পেরে চলে আসে বাংলাদেশে। পরে অনেক বুঝিয়েও মনিরাকে ফেরাতে পারেননি। অবশেষে সামাজিকভাবে দুই পক্ষের লোকজন বসে ২০১০ সালের ৭ অক্টোবর আপসের মাধ্যমে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। মেয়ে তুলি ছোট হওয়ায় উপস্থিত দরবারিরা তাকে মায়ের জিম্মায় রাখার জন্য সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু ভরণপোষণের দায়িত্ব থাকে পিতা হারুনের ওপর। এ অবস্থায় যখন ২ বছর ৬ মাস অতিবাহিত হয়, মনিরার পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাবা কফিল উদ্দিন হারুনকে বলে তাদের মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে হবে। যদি তোমার সন্তান আমাদের কাছে থাকে তাহলে আমার মেয়ে মনিরাকে বিয়ে দিতে পারব না। পরে তুলিকে তার পিতা হারুনের কাছে স্বেচ্ছায় দিয়ে দেয়। কিন্তু পিতার কাছে দেওয়ার ৪/৫ মাস পরই মনিরা বাদী হয়ে নরসিংদী আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তুলিকে মায়ের জিম্মায় দিয়ে দেন। পরে মনিরা শিশু তুলিকে নিয়েই বিয়ে করে তার পরকীয়া প্রেমিক মোশারফকে। শুরু হয় মনিরার দ্বিতীয় বিয়ের দাম্পত্য জীবন। এর মধ্যে তার দ্বিতীয় সংসার জীবনে শ্রদ্ধা নামে এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। সন্তান যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে প্রথম সংসারের সন্তান তুলির প্রতি অনীহা বাড়তে থাকে দ্বিতীয় স্বামী মোশারফের। একপর্যায় মোশারফ ফোন করে হারুনকে তার সন্তান নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরে ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ স্থানীয় মাতাব্বরদের উপস্থিতিতে তুলিকে গ্রহণ করেন হারুন। মেয়েকে নিয়ে হারুন বসবাস করেন ঢাকা সাভারের বাড়িতে। ইতিমধ্যে গত ২৩ নভেম্বর মনিরা তার মা জুয়েনার বেগমের যোগসাজশে তুলিকে পেতে নরসিংদীর আদালতে আবার মামলা দায়ের করে। আদালত সাভার থানা পুলিশকে শিশুটি উদ্ধারের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু ঘটনাটি ঢাকা জেলায় হওয়ায় সাভার থানা পুলিশ তুলিকে তার বাবার কাছ থেকে এনে ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করান। কিন্তু আদালত বাদী ঠিকানায় গরমিল পাওয়ায় পুনরায় তুলিকে নরসিংদী আদালতে পাঠান। আদালত শিশুটি তার নানি জুয়েনা বেগমের জিম্মায় সাময়িকভাবে রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। এভাবে বারবার মামলা করে শিশুটিকে নিয়ে টানা-হেঁচড়ায় স্বজনদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তুলির দাদি মরিয়ম বলেন, ‘মনিরা ও তার মা জুয়েনা শুধু একটি শিশুর জীবন নিয়ে খেলেনি। তারা আমাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মনোহরদী নিয়ে স্ট্যাম্পে টিপ নিয়ে আমার সকল সম্পত্তি মির্জাপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে জামালের নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। পরে রাতের আঁধারে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। বর্তমানে আমি অর্ধাহারে না খেয়ে অসহায় নিঃস্ব অবস্থায় আছি।’ নরসিংদীতে কর্মরত বেসরকারি সংগঠন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নেটওয়ার্কের জেলা শাখার চেয়ারম্যান ফাহিমা খানম বলেন, ‘শিশুটির মা মনিরার অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে এবং তার বর্তমান স্বামীও লালনপালনে অনাগ্রহী, সেহেতু প্রকৃত পিতার পরিবারে থাকাটাই উত্তম।’

     

রাইজিংবিডি/নরসিংদী/২৯ ডিসেম্বর ২০১৪/গাজী হানিফ মাহমুদ/টিপু