গাজী হানিফ মাহমুদ নরসিংদী, ২৬ জুলাই: দশম জাতীয় নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্য পরিবেশ’ সৃষ্টি হলে নরসিংদীর শিবপুর থেকে প্রার্থী হবেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব ‘সংস্কারপস্থী’ আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার ছেলে ভূঁইয়া নন্দিত নাহিয়ান স্বজন।
প্রয়াত নেতা মান্নান ভূঁইয়া সমর্থকদের গড়া ‘আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদ’ থেকে ‘স্বজন’ এর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৮ জুলাই মান্নান ভূঁইয়ার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন ভূঁইয়া নন্দিত নাহিয়ান স্বজন।
জানা যায়, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া নরসিংদী-৩ শিবপুর আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর বিএনপির মহাসচিব ছিলেন।
২০০৭ সালের এক-এগার পরবর্তী সময়ে দলের মধ্যে সংস্কারের প্রস্তাব করলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মহাসচিব পদ এবং দল থেকে মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক মান্নান ভূঁইয়া ২০১০ সালের ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। মান্নান ভূঁইয়ার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবন অনেকের কাছে প্রেরণা ও আর্দশের। তাই দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর প্রিয় নেতার পাশে দাঁড়িয়েছেন শিবপুরের বিএনপির বিশাল একটি অংশের নেতা-কর্মীরা।
তারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল হারিছ রিকাবদার কালা মিয়াকে আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মৃধাকে সদস্য সচিব করে গঠন করেন আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদ। পাশাপাশি সব ইউনিয়নেও কমিটি গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিবপুরে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ইতিমধ্যে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সমর্থনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফজলুল রহমান ফটিক মাস্টারসহ দুই ভাইস চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উপজেলার ৯টির মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে তাঁদের সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
কারারচর এলাকার মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থক খোরশেদ আলম নিয়াজী বলেন, `গত নির্বাচনে মান্নান ভূঁইয়ার পরাজয় তাঁর সমর্থকদের কষ্ট দিয়েছে। এই দুঃখবোধ থেকে বেরিয়ে এসে এবার তাঁর প্রতি আমাদের ঋণ শোধ করতে চাই। পিতার অবর্তমানে অভিভাবকহীন হয়ে পড়া শিবপুরের হাল ধরবেন স্বজন ভূঁইয়া-এই প্রত্যাশায় রয়েছি আমরা।’
মান্নান ভূঁইয়া যুব পরিষদের সদস্য সচিব উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার আবু তাহের বলেন, জীবিত মান্নান ভূঁইয়ার চেয়ে মৃত মান্নান ভূঁইয়া অনেক বেশি শক্তিশালী।
বিগত নির্বাচনে যারা ভোট দিতে পারেনি তারা নিজেদের ভুল বুঝেছে, যার প্রমাণ উপজেলা নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখন শিবপুরবাসী স্বজনকে এমপি নির্বাচিত করে বাবার স্থানে বসাতে চায়।
আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, আগামী ২৮ জুলাই মান্নান ভূঁইয়ার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
তিনি বলেন, `যারা মান্নান ভূঁইয়াকে ভালোবাসে তারা আজ একত্রিত। ইতিমধ্যে এরই ফলশ্র“তিতে আমরা উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমাদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছি। এখন আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য আমরা সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে কাজ শুরু করেছি।
মান্নান ভূঁইয়ার দুই ছেলের মধ্যে ছোট স্বজন। তিনি সিটি ব্যাংক এনএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন মান্নান ভূঁইয়ার সহধর্মিণী মরিয়ম বেগম ও ছেলে ভূঁইয়া নন্দিত নাহিয়ান স্বজন।
একই সঙ্গে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা বাড়াতে শুরু করেছেন স্বজন। এতে করে শিবপুরের রাজনীতিতে ভূঁইয়া পরিবারের প্রত্যাবর্তন হওয়ার বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভূঁইয়া নন্দিত নাহিয়ান স্বজন বলেন,‘শিবপুরের মানুষ আমার বাবাকে ভালোবাসে। তারা চায় শিবপুরে বাবার আদর্শ সমুন্নত থাকুক। তাই দেশে যদি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়, আমি সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। তবে কোনো সাজানো নির্বাচনে আমি প্রার্থী হব না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, `আমার বাবার সমর্থকদের গড়া আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। তবে বিএনপি মনোনয়ন দিতে আগ্রহী হলে বাবার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের মাধ্যমে দিতে হবে।’
রাইজিংবিডি/শামটি/এলএ