জাতীয়

সীমান্তে নেই কাঁটাতারের বেড়া ও সড়ক

সুজাউদ্দিন রুবেল, কক্সবাজার : বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। নেই সীমান্ত সড়কও। বিপরীতে মিয়ানমারের সীমান্তে রয়েছে টহল সড়ক ও বাংলাদেশ বেড়া। ফলে সীমান্তে কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা পাচার, থামছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ।

 

এদিকে ইয়াবা পাচার, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও টহল সড়ক নির্মাণ হলে এসব রোধে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিজিবি কর্মকর্তারা।

 

বিজিবি জানায়, ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের ৫৫ কিলোমিটার নদীপথ। আর বাকি ২১৬ কিলোমিটার স্থল সীমান্ত। স্থলভাগে মিয়ানমার সীমান্তের রয়েছে টহল সড়ক ও কাঁটাতারের বেড়া। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তে দেওয়া হয়নি কাঁটাতারের বেড়া। নির্মাণ হয়নি সীমান্ত সড়কও।

 

২৭১ কিলোমিটার সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির ৪৭টি বিওপি, ১২টি বর্ডার সেফটি পোস্ট, আটটি চেকপোস্ট ও চারটি স্পেশাল ক্যাম্প রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে শতাধিক ডিউটি পোস্ট। কিন্তু বিজিবির এতো কঠোর অবস্থানের পরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ইয়াবা পাচার। একই সঙ্গে বন্ধ হচ্ছে না রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও। এসব ঠেকাতে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও টহল সড়ক নির্মাণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

   

স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকায় মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় তাদের কর্মসংস্থান বাড়েনি। এ কারণে অনেকেই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তারা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে ইয়াবা, স্বর্ণ ও অস্ত্রের চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ মালামাল চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া মানব পাচারের মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটাছে প্রতিনিয়ত।

 

মিয়ানমার সীমান্তে অনেক আগেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত সুরক্ষায় কাঁটাতারের কোনো বেড়া নির্মাণ করা হয়নি। এখন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি কর্মকর্তারা।

 

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশ করে। ইতিপূর্বে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এদেশে অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ভয়ঙ্কর মাদক হিসেবে পরিচিত ‘ইয়াবা’ আসছে দেদারসে। ইয়াবার ছোবলে সারাদেশ এখন ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। এই দুটি সমস্যা এখন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

 

তুমব্রু সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হক জানান, রোহিঙ্গারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকার সুযোগ নিচ্ছে। তারা দালালদের সহযোগিতায় বিজিবির অবস্থান জেনে অনুপ্রবেশ করে।

 

তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদুল হক জানান, বিজিবি চৌকি, টহল, ওয়াচ টাওয়ার সবই রয়েছে। কিন্তু সীমান্ত সড়ক নেই। ফলে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার লোকজনকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নানা বিড়ম্বনার সম্মুখিন হচ্ছে। আর এসুযোগ কাজে লাগায় পাচারকারীরা। বিজিবি অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তারা ইয়াবাসহ নানা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে।

 

৩ নং ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম জাহাঙ্গীর আজিজ রাইজিংবিডিকে জানান, ঘুমধুম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় প্রতিদিন বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। সীমান্তের সকল ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দরকার সীমান্ত সড়ক।

 

টেকনাফ বিজিবি-৪২ অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবু জার আল জাহিদ রাইজিংবিডিকে জানান, টেকনাফ সীমান্তে চেকপোস্ট, টহল সবই রয়েছে। কিন্তু নেই সীমান্ত বেড়া ও টহল সড়ক। ফলে বিজিবির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আসছে ইয়াবা।

 

তিনি আরো জানান, সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টেকনাফে বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করবে। এর পাশাপাশি তৈরি হবে সীমান্ত সড়ক। মাস দুয়েক আগে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। জানানো হয়েছে সীমান্তের সুরক্ষায় দরকার ২৫/৩০ ফুটের একটি সীমান্ত সড়ক।

 

কক্সবাজারে বিজিবি-১৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল আলম রাইজিংবিডিকে জানান, বিজিবি অনেক আগে থেকে সীমান্ত সড়কের নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্র সচিবকে এর গুরুত্ব সর্ম্পকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার প্রতিটি আইন-শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।

 

বান্দরবান জেলার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ওয়ালির রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলের কারণে বিজিবির সীমান্ত সুরাক্ষায় বেগ পেতে হচ্ছে। যদি সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হয় তবে চোরাচালান, পাচার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।

 

কক্সবাজারে বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেকুজ্জামান রাইজিংবিডিকে জানান, টেকনাফের হৃীলা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা হয়ে বান্দরবানের রুমা পর্যন্ত মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্ত সড়ক। নদী আর দুর্গম পাহাড়ী পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। কিন্তু তারপরও থামানো যাচ্ছে না পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। তবে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হলে বন্ধ হয়ে যাব এসব অপরাধ।

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, সীমান্তে টহল সড়ক ও কাঁটাতারের বেড়া নির্মানের বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহল গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।

     

রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২২ মার্চ ২০১৫/রুবেল/সনি