মতামত

কিশোর বন্ধু, উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবে তুমি

।। ইয়াসিন হাসান ।।  শ্রদ্ধা দেখানোর চেয়ে ভয় দেখানো কী বেশি কার্যকরী? গত এক সপ্তাহে এ প্রশ্ন অনেককেই করেছি। উত্তরের অনুপাত হচ্ছে ২৫:৭৫। অর্থ্যাৎ শ্রদ্ধা দেখানোর অনুকুলে পড়েছে ২৫ শতাংশ ভোট আর ভয়ের পক্ষে পড়েছে ৭৫। বেশিরভাগই উত্তর দিয়েছেন এভাবে- মানুষকে শ্রদ্ধা করে সঠিক মূল্যায়ন পাওয়া যায় না, তবে ভয় দেখিয়ে সেটা পাওয়া খুব সহজ! সত্যি কি তাই? ভয় দেখিয়ে সব কিছু পাওয়া সম্ভব? আমি বিশ্বাস করি, নিজের কাজটুকু সঠিকভাবে করলেই জীবনে সাফল্য আনা সম্ভব। এখানে ভয় নয়, শ্রদ্ধাই বেশি কার্যকরী। নিজের কাজ, নিজের প্রতিষ্ঠানকে যে শ্রদ্ধা করে তার সাফল্যের সূচক সবসময়ই ঊর্ধ্বমুখী। যে প্রশ্নটা শুরুতে করেছি, সেটা বেশির ভাগ করেছিলাম ১৪ বছর থেকে ১৭ বয়স বয়সী ছেলেদেরকে। এ প্রশ্ন তাদেরকে কেন করা হয়েছে সেটা বলেছি। আজকাল ঢাকা বেশ উত্তপ্ত একটি শব্দ নিয়ে। এই শব্দটি গ্যাং। উত্তরায় এক কিশোর নিহত হওয়ার পর বেশ ঘটা করে শব্দটি উঠে এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গ্যাং কী এবং কেনই বা তৈরি হয়েছে। ওই কিশোরদের কাছেই প্রশ্নটা করেছি। তারা উত্তর দিয়েছে এভাবে, ‘আসলে এ বয়সে বুক চিঁতিয়ে চলতে ভালো লাগে। কেউ ভয় পেলে ভালো লাগে। কেউ ভয় পাওয়া মানেই নিজেদের শ্রদ্ধা পাওয়া।’ কিশোরদের জবাব শুনে যা বোঝা গেছে তা হলো এরকম- ভয় দেখিয়ে ও ত্রাস সৃষ্টি করে এই বয়সে ‘নাম কামাই’ করার আর ‘দাপট’ দেখানোর জন্যই কিশোর গ্যাং। স্কুল পড়ুয়া ১৫-২০ জন কিশোর একসঙ্গে চলাফেরা করার মানেই হচ্ছে গ্যাং। একজন একলা হেঁটে গেলে তার দিকে কেউ তাকাবে না কিন্তু ১৫-২০ জন একসাথে দল বেঁধে হেঁটে গেলে সবাই তাকাবে- এ কথা বলেছে তাদেরই একজন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এ গ্যাংয়ের কাজ কি? আসলে এদের কাজের কাজ কিছুই নেই। মেয়েদের উত্যক্ত করা, পাড়া-মহল্লায় চষে বেড়ানো, রাস্তার মোড়ে আড্ডা দেয়া, হুটহাট মারামারি- এগুলোই এরা করে থাকে। এদের কিছু পছন্দের কথা আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ওই তুই আমারে চিনস, কোন এলাকা, বড় ভাই। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষকরা বলেন, কিশোর বয়সে তো এমনটা হওয়ার কথা নয়। সালমান খান কিংবা শাকিব খানের মত হিরো হওয়ার বাসনা এ বয়সে জাগার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে হলেও তা দৃশ্যমান নয়। কিশোর গ্যাং সদস্যদের ধারণা হলো,  তাদের দেখে মানুষ ভয় পেলেই তারা হিরো! কিন্তু কিশোরদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তাদের বোঝানো উচিত,  এ বয়সে স্কুলের ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান অর্জন করতে পারলে হিরো হওয়া যায়। এ বয়সে ব্যতিক্রমী কিছু করতে পারলে হিরো হওয়া যায়। পত্রিকার কিশোর পাতায় নিজের একটি লেখা ছাপা হলে কিংবা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় প্রচার হলে হিরো হওয়া যায়। এসব হলে তখন নিজেকে আর চেনাতে হবে না, পাড়া-মহল্লার সবাই বলবে, ‘ওই যে অমুক, ক্লাসের থার্ড বয়। খুব মেধাবী। খেলাধুলায় যেমন ভালো তেমনই পড়াশোনায়।’ কিশোর বেলাটা হচ্ছে জীবনকে গড়ে তোলার আদর্শ সময়। এ বয়সে যাকে ‘আঁতেল’ মনে হবে, দেখা যাবে ওই ছেলেটাই একদিন সাফল্যের চূড়ায় বসে রাজত্ব করছে। কিশোর বন্ধুরা, জানতে চেষ্টা করো তোমার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ি কবে যায়। জানার চেষ্টা করো তোমার এলাকার কোন আপু বা ভাইয়া বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে, তার হাত ধরে তুমিও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারো। জোট তৈরি করো তাদের সঙ্গে যারা গ্রুপ স্টাডিতে আগ্রহী এবং জটিল অংক সমাধান করতে পারে। সংগীত, আবৃতি, অভিনয়, ছবি আঁকা ও খেলাধুলায় যুক্ত হতে পারো। মহাত্মা গান্ধীর অমর বাণী মনে রাখতে হবে, ‘প্রথমে তারা তোমাকে অবজ্ঞা করবে, তারপর তোমাকে দেখে হাসবে, তারপর ঝগড়া করবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় তোমারই হবে।’ পৃথিবীকে বদলাতে হলে প্রথমে তোমার নিজেকেই বদলাতে হবে। গুগলে সার্চ করে মানুষ তোমাকে খুঁজবে- এমন কিছু কর। তখন ধ্রুবতারার থেকেও বেশি উজ্জ্বল হয়ে জ্বলবে তুমি। লেখক: সাংবাদিক।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৭/ইয়াসিন/শাহনেওয়াজ