মতামত

স্থানীয় প্রযুক্তি উৎপাদক বাজেট

ইমদাদুল হক : ‘উন্নয়ন সড়কে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের।’ দশম জাতীয়  সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দিয়ে এমন কথাই জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আমরাও তার এ প্রত্যয়ের সঙ্গে একমত। বাজেটের দু-একটি দিক ছাড়া পুরোটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে পাঞ্জেরি হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা দেরিতে হলেও এবার স্থানীয় প্রযুক্তির উন্নয়ণ ও বিকাশ বিশেষ করে এই খাতের ‘মেক বাই বাংলাদেশ’ বা ‘আমাদের পণ্য’ নিয়ে গর্ব করার মতো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদকদের প্রণোদিত করা হয়েছে। ১ জুন সংসদে গৃহীত এই বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে এককভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। এই অর্থ মোট বাজেটের ২.৯১ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এ খাতে একক বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। গত ছয় বছরে আইসিটি খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৩.৫ গুণ। এই ছয় বছরের মধ্যে এ খাতে এটিই সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে ২ হাজার ৫২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পেশকালে আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রস্তাবিত বাজেটে এই বরাদ্দের কথা তুলে ধরেন। এ খাতে বরাদ্দ গত অর্থবছরের চেয়ে কমেছে ৩২১ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সংশোধিত বাজেটে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম শিল্পের উন্নয়নে এই মন্ত্রণালয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এই অর্থ গত বছরের চেয়ে ২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা বেশি। এদিকে এবারের বাজেটে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত ৩ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। একইসঙ্গে এই খাতের অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৯ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২,৮০৪ কোটি টাকা। ছয় বছরে ৩.৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৯ অর্থবছরে থোক বরাদ্দসহ এ খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯,২৬৩ কোটি টাকাতে। বাজেটের এই বরাদ্দ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদকে বলেন, আইসিটি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারাদেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক এবং ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লসরুম’ স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২০টি বিভাগ, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ইতোমধ্যে ই-ফাইলিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। তিনি বলেন, সারাদেশের প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিস একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বিদ্যমান সাবমেরিন ক্যাবলের ক্যাপাসিটি ৪৪ জিবিপিএস হতে বাড়িয়ে ২০০ জিবিপিএসে উন্নিত করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি ৩১ লাখ এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আবুল মাল অব্দুল মুহিত বলেন, সম্ভাবনাময় এ খাতে প্রয়োজনীয় শুল্ক কর প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাডের স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছি। এর ফলে দেশে সংযোজিত ও উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও ফোনের দাম কমার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কর ও শুল্ক ছাড়ের এই উদ্যোগ নিয়ে মুহিত বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আমাদের সরকারের অন্যতম উন্নয়ন কৌশল। এ লক্ষ্যে ১৯৯৬ সন হতে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অধিকাংশ পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর রেয়াতি সুবিধা দিয়ে আসছি। ফলে এ প্রযুক্তি দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় আইসিটি খাত রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখবে। শুল্ক ও রেয়াত সুবিধা কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে নতুন করে মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ট্যাব উৎপাদনে ব্যবহার হয় এমন প্রায় ৫০টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়ে অভিন্ন ১ শতাংশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আগে আমদানি শুল্ক ছিল ২১টি পণ্যে ২৫ শতাংশ, একটি পণ্যে ১৫ শতাংশ, ১০টি পণ্যে ১০ শতাংশ ও ১৮টি পণ্যে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ ছিল। সেলুলার বা মোবাইল ফোন উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এমন ৪৪টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পণ্যে আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, বাকিগুলি কমিয়ে ১ শতাংশে নামানো হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি পণ্যে আমদানি শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ, ১টি পণ্যে ১৫ শতাংশ, ১৫টিতে ১০ শতাংশ ও ১৩টি পণ্যে আমদানি শুল্ক ছিল ৫ শতাংশ। এরমধ্যে কম্পিউটার মনিটর, ল্যাপটপ এবং ট্যাবের জন্য কিবোর্ড মাউসের এ-কাভার, বি-কাভার, সি-কাভার, ডি-কাভার; ব্যাক কাভার, সাইড কাভার-লেফট, রাইট-কাভার;স্ট্যান্ড রাবার, থার্মাল প্যাড, কনডাক্টিভ ফেবরিক, গ্লাস ফাইবার, মনিটরের জন্য গ্লাস কাভার শিট, স্ক্রিউ, ওয়াশার, প্রটেক্টর স্টিল, ব্যাটারি তিন ভোল্টের, স্পিকারসহ আরও কয়েকটি যন্ত্রাংশে ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে আনার প্রস্তাাব করা হয়। এছাড়াও প্রসেসর থার্মাল পেস্ট, ট্রান্সমিটার, ক্যাপাসিটর, রেজিস্টার, পিসিবি, সার্কিট ব্রেকার, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, হিট সিংক, এলসিএম প্রটেকক্টিভ লেন্স, ক্যামেরা লেন্স, ফ্ল্যাশ লাইটে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। আর প্লাস্টিক রাবার আডিটিভস, এবিএস, ইন্টারনাল হার্ডড্রাইভ, এসএসডি, র্যাম, ইএমএমসি কিবোর্ড বটম কেস, ফ্যান মডিউলসহ আরো বেশ কয়েকটি যন্ত্রাংশে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য বাজেট বক্তব্যে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করা হয়েছে। বাজেটে সেলুলার টেলিফোন সেটের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা করা হয়েছে। একই শুল্ক ধরা হয়েছে মডেম, রাউটারসহ নেটওয়ার্কিং ডিভাইসে। আমাদানী শুল্ক দ্বিগুণ করায় ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, নেটওয়ার্ক সুইচ হাবের দামও এবার বাড়বে। এবারের বাজেটের আরেকটি উজ্জ্বল দিক হচ্ছে- দেশীয় সব সফটওয়্যার উৎপাদন ও সরবরাহকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। ফলে দেশীয় সফটওয়্যার কিনতে এখন যে ৫ শতাংশ উৎসে ভ্যাট দিতে হয় তা আর থাকছে না। ওয়েবসাইট বানিয়ে তা সরবরাহের ভ্যাটও তুলে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য খাতটিতে ব্যবহার্য তৈরি পণ্য ও সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করার কথাও বলা হয়েছে। সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, ওয়েবসাইট ডেভেলমেন্টসহ ৮ খাতে কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। উল্লেখিত দুটি খাত ছাড়াও অব্যাহতির তালিকা রয়েছে ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালাইসিস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিসেস, ওভারসিস মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিসেস। এছাড়া অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডকে কর অব্যাহতি প্রদানের কথা বলা হয়েছে এবারের বাজেটে। তবে এক্ষেত্রে উক্ত ফান্ডের আয় যখন বন্টিত হবে তখন তা লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত ও করযোগ্য হবে বলে স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ই-কমার্স খাতে ৩৫ শতাংশ ট্যাক্স বহাল রাখা হয়েছে। খাতটির এগিয়ে যাওয়ার পথে এই ট্যাক্সকে অন্যতম অন্তরায় মনে করছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের অঙ্গীকার বাজেট প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে রপ্তানিমুখী করা এবং এই সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে সরকার ১১টি সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে এ অর্থবছরে সর্বোচ্চ মধ্যমেয়াদি এবং সুদৃঢ় দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অঙ্গীকার

১. সব সরকারি দপ্তরের সব নির্বাহী স্তরে ই-সেবা চালুর মাধ্যমে সরকারি সেবাকে সহজ, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। ২. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ই-গভর্নেন্স চালুর মাধ্যমে সরকারি কর্মকাণ্ডের দ্রুততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ৩. ভূমি রেকর্ড ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ভূমি এবং জলমহাল ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ ও কার্যকরী করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ৪. ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫. তথ্য অধিকার আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। ৬. ‘আইসিটি রোড ম্যাপ ফর বাংলাদেশ পাওয়ার সেক্টর’ অনুযায়ী বিদ্যুৎখাতে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) বাস্তবায়ন ও একটি সমন্বিত ডেটা সেন্টার স্থাপন করার কথা জানানো হয়েছে। ৭. গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। ৮. দেশে ই-কমার্সের বিকাশের জন্য সুষ্ঠু আইনি, নিয়ন্ত্রণমূলক এবং প্রযুক্তিভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে। ৯. উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রসার নিশ্চিত করার বিষয়। ১০. সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও কারিগরি কাঠামো গড়ে তোলা। ১১. ঘোষিত হয়েছে ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনিক কাঠামো সৃষ্টির অঙ্গীকারের কথা। মধ্যমেয়াদী পদক্ষেপ

১. সরকারের সব নির্বাহী স্তরে ই-গভর্নেন্স চালুকরণ। ২. স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে ই-গভর্নেন্স প্রবর্তন। ৩. সব পোস্ট অফিসকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তর। ৪. স্যাটেলাইট সেবার সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে চরাঞ্চল, উপকূলীয়, পাহাড়ি এবং দুর্গম অঞ্চলসমূহে কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ৫. দেশে ই-কমার্সের বিকাশের জন্য সুষ্ঠু আইনি, নিয়ন্ত্রণমূলক এবং প্রযুক্তিভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলা। ৬. ডিজিটাল আর্থিক সেবার প্রসার নিশ্চিত করা। ৭. সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও কারিগরি কাঠামো গড়ে তোলা। ৮. সব মন্ত্রণালয়/দপ্তর থেকে অনলাইনে তথ্য প্রাপ্তির কৌশল প্রণয়ন। ৯. ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য প্রশাসনিক কাঠামো সৃষ্টি। ১০. বিদ্যমান সব সরকারি ডেটাবেইসের মধ্যে সামগ্রিক সমন্বয় করা ও তথ্যের আদান-প্রদান নিশ্চিত করা। ১১. সব নাগরিকের জন্য সমন্বিত নাগরিক ডেটাবেইস (ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার- এনপিআর) তৈরি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ১. ই-গভর্নেন্স মডেল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। ২. মোবাইলের মাধ্যমে সরকারের সব সেবা প্রদান। ৩. সরকারি কাজ পরিচালনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির টেকসই সমন্বয়ের স্বার্থে এ প্রক্রিয়ার পরিবর্তন। পরিকল্পনায় সবিস্তার গুরুত্ব পেয়েছে শিক্ষা খাতের প্রযুক্তি রূপান্তরকরণ। বাজেটে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন আর বিজ্ঞান ও প্রকৌশল খাতের বিভিন্ন উন্নয়নে ২,৩৭,২৬,০০,০০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক প্রকল্পের জন্য ২,০৪,৭৭,০০,০০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এই অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনার কথাও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে বাজেট বক্তৃতায়। এতে সন্নিবেশিত উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনাগুলো হচ্ছে-

 

             ২০১৭ সালের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ক্লাসরুমকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে রূপান্তর;              ২০১৭ সালের মধ্যে ১০টি কম্পিউটার সহযোগে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাবরেটরি তৈরি।              জাতীয় গ্রন্থাগারে সংগৃহীত অনেক পুরানো জনগুরুত্বপূর্ণ বই ২০১৮ সালের মধ্যে স্ক্যান করে পিডিএফ-এর মাধ্যমে পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করা।              ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব প্রতিষ্ঠা।              ৪০৮৬টি মাদরাসায় কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন।              ২০২১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।              অবশিষ্ট ৩৬৫টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার স্থাপন।              অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করা।              শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তির আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ, ফলাফল প্রদানসহ সব সেবা অনলাইনে প্রদান নিশ্চিতকরণ।              শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের একাডেমিক রেকর্ড ও হাজিরা তথ্য অভিভাবকদের অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া। এছাড়াও বাজেটের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অধ্যায়ে রূপকল্প ২০২১ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সার্বিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে আইটি/আইটিইএস সেবার দ্রুত প্রসার এবং তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশে আরও ১২টি হাইটেক পার্ক স্থাপন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, চট্টগ্রাম বন্দর, কক্সবাজারের রামু, রংপুর সদর, নাটোরের সিংড়া, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ, বরিশাল সদর এবং খুলনার কুয়েট ক্যাম্পাসে স্থাপিত হবে এসব পার্ক। এর বাইরে দেশের সাতটি স্থানে আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চ গতির ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ই-জিপি বা ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রমের সম্প্রসারণ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল ইম্পিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট’ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় গৃহীত এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩টি বৃহৎ সরকারি সংস্থায় ই-জিপি সিস্টেম সম্প্রসারণ করা হবে। এর ফলে সরকারি ক্রয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ দরপত্র ই-জিপির আওতায় আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অবশ্য সরকারি-বেসরকারি সেবায় ইন্টারনেট সুবিধা সুলভ করা হয়নি এবারের বাজেটেও। ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে এনটিটিএনের পক্ষ থেকে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে ইন্টারনেট আরো সহজলভ্য করা না হলে ডিজিটাল ইকনোমি নির্ভর এই বাজেটের সুষম বিন্যাস কিছুটা হলেও ম্লান হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে এবারের বাজেট দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে মাইলফলক। এটি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বুনিয়াদী উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তথ্য-প্রযুক্তি ভোক্তা থেকে বাংলাদশ উৎপাদক দেশ হিসেবে বিশ্বজয়ের সুযোগ পাবে। তবে এ জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ মানবসম্পদ উন্নয়ন, বাজার গবেষণা ও ব্র্যান্ড সুরক্ষায় সবিশেষ নজর দিতে হবে।  

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুন ২০১৭/অগাস্টিন সুজন