মতামত

বাঙালির স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি

প্রফেসর ড. মু. নজরুল ইসলাম : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, তার তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং ছোট ছেলে শিশু শেখ রাসেল ও বঙ্গবন্ধুর নিকটাত্মীয় তিনজনের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীর হাতে নিহত হন। এই মৃত্যু কারও কাম্য হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনা তখন বিদেশে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম ওয়াজেদের সাথে।

একবার ভাবলেও শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে কিভাবে এতটা শোক সহ্য করে বেঁচে থেকেছেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের জন্য হলেও এ দেশ কলঙ্কের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা করতে পেরেছে। কারণ, জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সুদৃঢ় পদক্ষেপে সকল আইন কানুন মেনে এই জঘন্য হত্যাকান্ডের বিচার করতে পেরেছেন। কোনো কোনো হত্যাকারীর বিচার সম্পন্ন হয়ে দণ্ডও কার্যকর হয়েছে।

এখন খুব সাবধানে চলার দিন। কারণ, ১৯৭৫ সালের কাল-রাত্রির কূচক্রীদের প্রেতাত্মারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট চেষ্টা করেছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে আবার শেষ করে দেয়ার, পারেনি। আল্লাহপাক সে যাত্রা রক্ষা করেছেন। এমনতরো হাজারো আক্রমণ প্রতিহত করে শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের দুঃখ দিনের পরিসমাপ্তি করার জন্য নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সাবধান হতে হবে। আমরা সাবধানী হয়ে মূলেই ধ্বংস করতে চাই ষড়যন্ত্রকারীদের। আল্লাহপাক আমাদের সহায় হোন।

একটা জাতিকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে যখন দেশকে গুছিয়ে এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাঁকে রাতের অন্ধকারে কাপুরুষেরা হত্যা করল স্ব-পরিবারে। দেশ যেতে থাকল পিছিয়ে। ষড়যন্ত্রকারীরা তো তাই-ই চায় সবসময়। তবু, বাঙালি জাতি তাঁকে ভুলে যায়নি এক বিন্দুও।

একটি জাতিকে কি অবিস্মরণীয় অঙ্গুলি নির্দেশে জাগিয়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাতি জেগেছিল। তেইশটি বছরের সংগ্রাম  শেষে ১৯৭১  সালে যখন পাকিস্তানি জান্তারা নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, কাল-বিলম্ব না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের দাপ্তরিক ঘোষণা দিলেন। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হলাম। দেশটি যখন গড়ে এনেছিলেন তিনি, তখনই তাঁকে সরিয়ে দেয়া হল পৃথিবী থেকে। আমরা আমাদের সহজ চলার পথ হারিয়ে ফেললাম। করা হল দিশেহারা।

জাতির পিতা তাঁর নিরলস শ্রম দিয়ে যখন জাতিকে বিশ্বে দাঁড় করিয়ে ফেললেন, ঠিক তখুনি শকুন-কুকুরের মতো পা চাটা লোকগুলি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আমাদের কৃঞ্চ গহ্বরে নিয়ে গেল। আমরা তখন অমানিশার অতলে তলিয়ে যেতে থাকলাম। কু-চক্রীমহল তখন স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে আমার পতাকা লিজ দেয়া নিয়ে ব্যস্ত। জাতি তলিয়ে যেতে থাকল অতলে। এই কি চেয়েছিল আমার পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা?

যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে তখন জাতির পিতার কল্যাণে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে তার জানান দিতে শুরু করেছে সার্বভৌম পতাকা নিয়ে। জাতি স্বপ্নে বিভোর। জাতির পিতা স্বপ্নে বিভোর। বাঙালি তখন দুবেলা নিজের অন্ন খেয়ে বাঁচে নিজ গরিমায়। স্বপ্নটাকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়ার জন্যই জাতির পিতাকে মেরে ফেলা হল। আমরা খেই হারিয়ে ফেললাম। অগ্রযাত্রাটা থিতু হয়ে গেল। স্বপ্ন ভেঙ্গে তখন টুকরো টুকরো বাজে অভ্যাসে পরিণত হল। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু থেকে নিচুতর হতে লাগলাম।

লেখক : হলি ফ্যামিলির অর্থোপেডিক বিভাগের প্রফেসর ও আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর শাখার স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ আগস্ট ২০১৯/এনএ