চলচ্চিত্রকে সমাজের দর্পণ বলা হয়। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শক বিনোদিত হওয়ার পাশাপাশি সচেতন হওয়ার অবকাশ পান। একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকেন পরিচালক, শিল্পী, প্রযোজক, গল্পকার, ক্যামেরাম্যান, নৃত্য পরিচালক, ফাইট ডিরেক্টর, মেকআপম্যান, স্থিরচিত্রীসহ অনেকে। তাদের প্রত্যেকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে নির্মিত হয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
চরিত্রের প্রয়োজনে শিল্পীকে সাজতে হয়। কখনও সুদর্শন বা কখনও ভয়ংকর কিংবা কুৎসিত রূপে। সাজানোর কাজটি করেন রূপসজ্জা শিল্পীরা। অন্যকে সাজিয়েই তারা তৃপ্তি পান। এটি তাদের পেশা। তাদের হাতের ছোঁয়ায় বদলে গেছেন অনেক তারকা অভিনয়শিল্পী। চলচ্চিত্র ভালোবেসে স্বল্প পারিশ্রমিকে তারা নায়ক কিংবা নায়িকাদের সাজিয়ে থাকেন। চলচ্চিত্রে তাদের রয়েছে অবদান। যে কারণে তাদের হাতেও ওঠে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এটি তাদের কাজের স্বীকৃতি।
চলচ্চিত্র নির্মাণের পর প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সিনেমার পোস্টার। চলচ্চিত্র নির্মাণের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে পোস্টার তৈরি। পোস্টার দেখেই দর্শক অনুমান করেন সিনেমার গল্প কেমন হতে পারে, কোন ধরনের সিনেমা ইত্যাদি। এই কাজটিও চলচ্চিত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পোস্টারের জন্য ছবি তুলে থাকেন স্টিল ফটোগ্রাফার। এছাড়াও সিনেমার পূর্বের দৃশ্যের সঙ্গে ড্রেস-মেকআপের মিল রাখতে শুটিংয়ের সময় স্থিরচিত্র ধারণ করাও তার কাজ। তুলনামূলক স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজটি করেন তিনি। এদের অনেকেই কম পারিশ্রমিক হলেও ভালোবাসা থেকেই এই প্রফেশনে কাজ করছেন।
চলচ্চিত্রে এই দুই সেক্টরেরই ভূমিকা অনেক। এই কাজ করতে গিয়ে নির্মাতা, প্রযোজক, শিল্পী ও অন্যান্য কলাকুশলীদের সঙ্গে তৈরি হয় সুসম্পর্ক। সম্প্রতি এই দুই সেক্টরের লোকেদের ‘চামচা’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিচালক কাজী হায়াৎ। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের দুটি ডিপার্টমেন্ট ‘মেক-আপম্যান’ ও ‘স্টিল ফটোগ্রাফার’। এদের যারা প্রধান তারা সাধারণত নায়ক-নায়িকা, প্রযোজকদের মোসাহেবি করে, বাংলা কথায় চামচামি করে। যদিও ‘চামচামি’ বলার জন্য অনেকে আমার ওপর রাগ করতে পারেন। তাদের তো বিবেক আছে, ব্যক্তিত্ব আছে। তাদের ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে না চামচামি করতে? আমার পক্ষ থেকে বলব, আমার বয়স ৭৩। ৫০তম সিনেমার কাজ চলছে। এখনই তো আমার বলার সময়। আমি ছাড়া বলার আর কেউ নেই।’
এমন মন্তব্যে চটেছেন মেকআপম্যান ও স্টিল ফটোগ্রাফারদের অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছেন তারা। হঠাৎ এমন এক গুণী নির্মাতার মুখে এমন কথায় বিব্রত চলচ্চিত্রকর্মীরা। তার এমন মন্তব্যে নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। এ নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিও এই পরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। এদিকে মুখে কুলুপ এটেছেন এই নির্মাতা।
চলচ্চিত্রের জন্য অপরিহার্য মেকআপম্যান ও ফটোগ্রাফার। তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি বিশেষের দোষ থাকতে পারে। এ কারণে পুরো কমিউনিটি নিয়ে এমন মন্তব্য দৃষ্টিকটু। কাজী হায়াৎয়ের প্রতিটি বাক্য থেকে সমাজ শিখবে, জানবে এটাই হওয়া উচিত। ‘জিহ্বা ধাড়ালো অস্ত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর’ একথা প্রমাণ হয়েছে তার এমন বক্তব্যে। দুটি কমিউনিটি হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। অথচ এই নির্মাতা এ জন্য এখন পর্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করেননি। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন তিনি তার বক্তব্য ফিরিয়ে নেবেন। ঢাকা/রাহাত সাইফুল/তারা