মতামত

সরকার আর কী করতে পারে?

বিশ্ব অসহায় এক প‌রি‌স্থি‌তি‌তে যেন স্থবির হ‌য়ে আছে। অর্থ, শক্তি সবকিছুই যেন নির্বিকার এক অসহায়ত্বের মধ্যে হিমশীতলতায় অকার্যকর হয়ে গেছে কোভিড-১৯ নামক মরণঘাতি অজানা অচেনা অদৃশ্য এক শত্রুর কাছে। এই অদৃশ্য শত্রুর আকস্মিক নীরব আক্রমণ বিশ্বকে কার্যত অচল করে দিয়েছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে পৃথিবীতে বসবাসকারী সভ্যতার দাবিদার প্রায় সাড়ে সাতশ কোটি মানুষ । অদ্যাবধি সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো দিকনির্দেশনাও দিতে পারেনি কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞান। বিশ্বব্যাপী সমন্বিত নির্দেশনা হচ্ছে আলাদা হয়ে যাও প্রত্যেকে, পরস্পর তিন মিটার দূরত্ব বজায় রাখো, ঘর বন্দি করো নিজেকে।

এই নির্দেশনা কার্যকর করার জন্য সরকারি উদ্যোগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, বিপণী কেন্দ্র, যানবাহন চলাচল, পর্যটন কেন্দ্রসহ সকল কার্যক্রম বিভিন্ন দেশে দেশে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও সে উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য দশ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। যাতে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের হতে না হয়।

বৈশ্বিক মহামারির এই মহাবিপর্যয়ের সময় জনসমাগম রোধের জন্য সরকারি এই উদ্যোগকে আমরা ঈদের ছুটির মতোই উদযাপন করছি। এই বন্ধের সুযোগকে ব্যবহার করে ছুটি উপভোগের জন্য রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, বাস কাউন্টারে যে জনসমাগম হচ্ছে তা জনসমাগম রোধের যে উদ্দেশ্য তাকে দারুণভাবে ব্যাহত করেছে। এই ভাইরাসের যে চরিত্র এই পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে তাতে আজকের বাড়ি ফেরার যে আয়োজন তাতেই পুরো দেশে এই মরণঘাতি ভাইরাসের সফলতার জন্য যথেষ্ট।

কী করণীয় ছিল সরকারের? জনগণ যদি সরকারের উদ্যোগে সহায়তা না করে, সরকারের গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সাড়া না দেয় বা সহায়তা করা, সাড়া দেওয়ার বোধ না থাকে তাহলে সরকার কী করতে পারে?

এই অবস্থা থেকে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সামাজিক নেতৃত্ব ভবিষ্যতের জন্য কিছু শিক্ষা বোধকরি নিতে পারে- শুধু ইট পাথর কংক্রিট, প্রযুক্তি, উন্নয়ন দিয়ে যে উন্নতির পরিমাপ করা হয় তা টেকসই উন্নয়ন নয়। শুধুমাত্র এসবের উন্নয়ন দিয়ে উন্নতির পরিমাপ করা হলে স্বার্থান্ধ, দলান্ধ, মতান্ধ, ধর্মান্ধের উন্নয়ন হবে। যে উন্নতি শোক আর উৎসবের পার্থক্য বোঝার ধার ধারেনা, তারা অন্ধকারেও ধান্ধার খোঁজে বুদ্ধি আবিষ্কার করবে।

 

ঢাকা/তারা