মতামত

মাঠের বাইরে সাকিব কিন্তু ঠিকই ‘খেলছেন’!

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন নিউ জিল্যান্ডে খেলছে। জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা শুরু হচ্ছে সোমবার, ২২ মার্চ থেকে। ক্রিকেটাররা প্রায় সবাই মাঠের খেলায় ব্যস্ত। কিন্তু এই ব্যস্ততা নেই সাকিব আল হাসানের। তিনি আছেন পূর্বনির্ধারিত ছুটিতে। পরিবারের কাছে, নিউইর্য়কে। তবে ছুটিতে থাকলেও সাকিব কিন্তু ঠিকই বড় একটা ‘খেলা’ খেলে দিলেন! 

অনলাইন সাক্ষাতকারে লম্বা সময় ধরে যা বললেন তাতে এখন বিসিবি’র বেশ কয়েকজনের ‘উইকেট’ নড়বড়ে!

তবে নিজের ছুটি, আইপিএলে অংশগ্রহণ, টেস্ট না খেলা, আকরাম খান ও নাইমুর রহমান দুর্জয়ের সরাসরি সমালোচনা, সেই সঙ্গে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনের ভূয়সী প্রশংসা এবং বিসিবি সভাপতি হিসেবে নিজেকে দেখতে চাওয়ার খায়েশ-ইত্যকার প্রসঙ্গে যা বললেন তার অনেককিছুতেই তৈরি হলো নতুন বিতর্কের রসদ!

১) সাকিব বলছেন তিনি টেস্ট খেলতে চান না-এমন কথা নাকি কখনোই বলেননি। তিনি বিসিবি’র কাছে যে চিঠি দিয়েছেন সেখানে লিখেছেন টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অনুশীলনের জন্য তিনি আইপিএলে অংশ নিতে চান। সাকিবের অভিযোগ আকরাম খান সম্ভবত তার চিঠি পড়েই দেখেননি। তাই আকরাম খান এখন যে বলছেন সাকিব টেস্ট খেলতে চান না সেটা ভুল। তার কোন যুক্তি নাকি নেই! 

ব্যাখ্যা: সাকিব চিঠিতে আসলেও তাই লিখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো সাকিব যে সময় আইপিএল খেলবেন তখন তো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ খেলবে। তাহলে বিষয়টা কি দাড়াল? হিসেব পরিস্কার-সাকিব আইপিএলে খেললে সেই দুই টেস্ট মিস করবেন। আর এই টেস্ট সিরিজ সূচি তো সাকিবেরও জানা। এখানেই তো পরিস্কার সাকিব টেস্টের বদলে আইপিএলকে বেছে নিলেন। তাহলে আকরাম খান ভুল কি বললেন?

২) শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ প্রসঙ্গে সাকিব আরেকটি চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, এই টেস্টে খেলে কি হবে? দুটো ম্যাচ জিতলেও তো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলা যাবে না। চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য এই দুই টেস্ট তেমন মূল্য বহন করে না!

ব্যাখ্যা:  টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত তো মাত্র দুটো দেশ খেলবে। কিন্তু তাই বলে বাকি টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্য টেস্ট ক্রিকেট কি আর কোন অর্থবহন করে না? 

৩) সাকিব বলছেন, আইপিএলের সময় আর কোন দেশ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলে না। শুধু বাংলাদেশ খেলছে। সাকিবের প্রশ্ন-আফগানিস্তানের কোন ক্রিকেটারকেও আইপিএলের সময় নিজ দেশের হয়ে খেলতে দেখেছেন? তাদের বোর্ড খেলোয়াড়দের আইপিএলে খেলা নিশ্চিত করে দেয়। আমরা যদি নিজেদের খেলোয়াড়দেরই মূল্যায়ন না করি তাহলে তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের হয়ে ভাল খেলা কিভাবে প্রত্যাশা করি? 

ব্যাখ্যা: আইপিএলে খেলেন বাংলাদেশের মাত্র দুজন খেলোয়াড়। তাহলে এই দুজনের খেলা দেখার জন্য এই সময় বাংলাদেশের পুরো দলের কি নিজেদের খেলা বন্ধ করে টেলিভিশন সেটের সামনে বসে থাকা উচিত? সাকিব ভুলে গেছেন, ক্রিস গেইল পাকিস্তান ক্রিকেট লিগ (পিসিএল) না খেলে জাতীয় দলে খেলার জন্য ফিরে গেছেন। উদাহরণ যখন দেবেন তখন দুই পক্ষেরই দেয়া উচিত। বিসিবি নিজেদের খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করে না-সাকিবের এই অভিযোগটা অনেক বড়। বিসিবি কি সাহসী হবে প্রতিক্রিয়া জানাতে?

৪) সাকিব তার বক্তব্যে আকরাম খান ও নাইমুর রহমান দুর্জয়ের সরাসরি সমালোচনা এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং খালেদ মাহমুদ সুজনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। 

ব্যাখ্যা: সাকিবের ছুটি এবং টেস্ট না খেলা প্রসঙ্গে মিডিয়ার সামনে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি মন্তব্য করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন স্বয়ং। শুধু এবারই নয়, এর আগেও তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন। সাকিবের টেস্ট না খেলা প্রসঙ্গে মিডিয়ার সামনে বিসিবি সভাপতি স্পষ্টই বলেন, যারা এখন টেস্ট খেলতে চাইছে না তাদের এই আচরণে আমি মনে কষ্ট পেয়েছি। কার্যত বিসিবি সভাপতি ২২ ফেব্রুয়ারির বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সাকিব এবং মোস্তাফিজের সমালোচনাই করেন। সাকিব এখনো রাজনীতিতে নামেননি, তবে তিনি বেশ ভালই জানেন সবাইকে একসঙ্গে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলতে হয় না। 

৫) ভবিষৎতে নিজেকে বিসিবি সভাপতির চেয়ারে দেখতে চান সাকিব। চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন এই কাজেও তিনি বাকি যে কাউকে ছাড়িয়ে যাবেন। সেরা হবেন। 

ব্যাখ্যা: সাকিব এখনো খেলোয়াড়ি জীবনে রয়েছেন। বিসিবি সভাপতি হওয়ার খায়েশ তার থাকতেই পারে। সৌরভ গাঙ্গুলি হয়তো বা এক্ষেত্রে তার পথ প্রদর্শক হতে পারেন। হয়তো বা পাকিস্তানের ইমরান খানের মতও সাকিবের আরও বড় স্বপ্ন থাকতে পারে। তবে ভাল খেলোয়াড় মানেই যে ভাল প্রশাসক-এই সরলীকরণে বড় ভ্রান্তি আছে। ম্যারাডোনা জগৎসেরা ফুটবলার ছিলেন। কিন্তু কখনো কি সফল কোচ হতে পেরেছেন? বাড়িতেই এমন আরেকটি উদাহরণ হয়ে আছেন আমাদের ফুটবলের কাজী সালাহউদ্দিন।

যাক, সাকিব বিষয়ে সেই সিদ্ধান্তে পৌছাতে এখনো আরো অনেকদিন বাকি। তবে এই মূহুর্তের খবর হল, ব্যাট-বলের মাঠে ক্রিকেটে না থেকেও সাকিব কিন্তু ঠিকই ‘খেলে’ যাচ্ছেন মাঠের বাইরে।

সাক্ষাতকারের পর আপাতত সেই ‘খেলায়’ এখন তার জয়। তবে খেলা এখনো শেষ হয়নি!

নারায়নগঞ্জের সেই রাজনীতিবিদের স্লোগানটা মনে পড়ে গেল, "খেলা হবে"!