মতামত

শ্রমঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠান মানব সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে

২০ মে, মানব সম্পদ দিবস। একটি দেশের চালিকাশক্তি তার মানব সম্পদ বা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। যে কোনো দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হিসেবে এটি বিবেচিত। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে না পারলে দেশ ও জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ে। মানব সম্পদ দিবসটি মনে করিয়ে দেয় দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় এনে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানোর কথা। এছাড়া ভবিষ্যৎ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা। একটি দেশের মানব সম্পদের অনেক বড় অংশ অবসরে চলে যান। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি দেয়ার তাগিদ বয়ে আনে এই দিবস।

চলতি বছর মানব সম্পদ দিবসটি ‘HR Shaping the New Future’ বা ‘মানব সম্পদ নতুন ভবিষ্যৎ তৈরি করছে’ শ্লোগান সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানব সম্পদ যেমন আগামী তৈরি করছে, তেমনি তাদের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরি করাও একটি দেশ এবং প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। একটি প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তারা প্রত্যেকে ওই প্রতিষ্ঠানের মানব সম্পদ। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার মানব সম্পদ সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে। সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে একটি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য না হয়, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। 

শুধু মানব সম্পদ হিসেবে যারা বিবেচিত অর্থাৎ যারা এখন কাজে নিয়োজিত তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করাই নয়, ভবিষ্যৎ মানব সম্পদ যারা হবেন তাদের জন্য আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে। আর তাদের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরির করতে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ- নিত্যনতুন প্রযুক্তির প্রভাবে জীবন যাপন পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মী নিয়োগ সংস্কৃতিও এখন পর্যন্ত ঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে কর্মী ও কর্মের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লেগে যায়। সমস্যা সমাধানে দরকার হয় প্রশিক্ষণ। মানবসম্পদ দিবসে আমাদের লক্ষ্য হতে পারে কর্মীমুখী প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন করা। 

আমাদের মতো দেশে কাজের সুযোগ প্রয়োজনের তুলনায় কম। বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর বেকারের তালিকায় অনেক উচ্চশিক্ষিত লোক যুক্ত হচ্ছেন। নতুন নতুন প্রযুক্তি বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দেবে বলে আমাদের মনে যে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা অমূলক নয়। তবে, আমরা যদি পেছনে তাকাই, দেখতে পাই এমন অনেক প্রযুক্তিই গত পঞ্চাশ বছরে যুক্ত হয়েছে যা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে কর্মীকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। আমরা নিজেরাও অনেক কাজের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। এই যে আমরা মোবাইল অপারেট করছি; আগে কিন্তু পারতাম না। এখন সব স্তরের মানুষ এটি আয়ত্ব করে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে নতুন এই প্রযুক্তি আমাদের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে, এর প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে এবং আমরা শিখে নিয়েছি। বলা যায় যে, আবার নতুন কোনো প্রযুক্তি আমাদের জীবন যাপনের সঙ্গে যুক্ত হলে তার সঙ্গেও ঠিক একইভাবে সামঞ্জস্য বিধান করব এবং তার সুফল ভোগ করব। 

প্রযুক্তিনির্ভর চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এখন আমাদের দোরগোড়ায়। এই সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর কাজের চাহিদা বাড়বে। কায়িক শ্রমের চাহিদা কমবে। সুতরাং ভয় পেলে চলবে না। বলা হচ্ছে, যোগ্যরাই টিকে থাকবে। সুতরাং প্রযুক্তিবান্ধব কর্ম পরিবেশে যোগ্য হয়ে ওঠার বিকল্প নেই। সঠিক এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করে জাতীয় জীবনে সুফল বয়ে আনতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে নতুন প্রযুক্তি আমাকে কাজের কোন কোন সুযোগগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে এবং নতুন কোন কোন কাজের সুযোগ তৈরি করছে। নতুন তৈরি হওয়া কাজের খাতগুলো যাতে দেশীয় মানব সম্পদ দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে সরকার এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের সামনে অনেক উন্নয়নশীল দেশের উন্নত হয়ে ওঠার উদাহরণ রয়েছে। তারা কীভাবে বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে মানব সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছে সে বিষয়ে জানার সুযোগ রয়েছে। আমরা সেসব দেশের অতীত, বর্তমান এবং পরিবর্তন লক্ষ্য করব এবং নিজেদের করণীয় ঠিক করব। অন্যদিকে, নিজের দেশের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা অন্য অনেক দেশের কাছে উদাহরণ তৈরি করতে পারব। এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য পুঁজিঘন প্রতিষ্ঠান নয় বরং শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ। এই দেশে শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে মানব সম্পদের বিন্ন্যাস সহজ হবে। দেশের উন্নয়নে সব স্তরের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে। মানব সম্পদের অপচয় বা অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে, এতে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। এই দিবসের তাৎপর্যপূর্ণ সফলতা কামনা করছি। সব স্তরের মানব সম্পদ যারা অতীতে দেশ ও জাতিকে সেবা দিয়েছেন, এখন যারা কর্মরত আছেন এবং আগামীতে যারা দেশের চালিকাশক্তি হিসেবে যুক্ত হবেন প্রত্যেককে শুভেচ্ছা।