জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮

‘গ্রেপ্তার বন্ধ না হলে উদ্ভুত পরিস্থিতির দায় সরকারের’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : গায়েবী মামলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ না হলে উদ্ভুত পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দূর্ভাগ্যজনকভাবে বিচারবিভাগকে সরকার তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। অথচ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় তফসিলের পরে কোনও গ্রেপ্তার হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত পরিস্কার, এই নির্বাচন কমিশন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সুষ্ঠ অবাধ নির্বাচনের অবস্থায় নেই। তারা সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে।’ ‘এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা স্পষ্টভাবেই বলতে চাই গায়েবী মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ করুন, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিন, অন্যথায় উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সকল দায়-দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে’, বলেন বিএনপির মহাসচিব। বর্তমান ব্যবস্থায় কোনো অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটাই এখন এই মুহূর্তে জাতির সবচেয়ে বড় সংকট। এই সংকট সমাধানের জন্য আমরা বার বার আলোচনার কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। এই কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিশ দলের পক্ষে থেকে সাত দফা দাবি জানিয়েছি। সরকার কোন কর্ণপাত না করে একতরফাভাবে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্রহসনের নিবাচন অনুষ্ঠান করতে চলেছে।’ নির্বাচন কমিশনও সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নের জন্য উৎসাহ নিয়ে কাজ করে চলেছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সংবিধান প্রদত্ত তাদের অধিকার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে, নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠ করার কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। উপরন্ত সরকারের নীল-নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি করেনি, কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা ও তাদেরকে গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ও তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা সরকার সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও হামলার শিকার হচ্ছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বেশির ভাগ কথাই অবান্তর।’ তিনি বলেন, ‘আমি ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন দিন! এরপর দেখুন কে কত আসন পায়? আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসন পাবে না।’ বিএনপি মহাসচিব জানান, ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জে ২৫ জন, ঢাকা মহানগরে ৩৯৪ জন, মানিকগঞ্জ ও বগুড়ায় ৫৩৭ জন এবং ২৬ নভেম্বর তিনজনসহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই অবস্থায় কতটুকু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব- সেই প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৮/রেজা/শাহনেওয়াজ