জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন না খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতার জন্য নির্বাচন কমিশনে তার পক্ষে করা আপিল নামঞ্জুর করা হয়েছে। ফলে আপাতত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। অবশ্য এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তার। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আপিলের ওপর শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তার আপিল নামঞ্জুর করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতার পক্ষে মত দেন। তবে অন্য চারজনের বিরোধিতার ভিত্তিতে আপিল নাকচ করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। শনিবার দুপুরে একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার তিনটি আপিলের ওপর শুনানি হয়। বিকেল ৫টায় আবার শুনানি হবে, উল্লেখ করে আপিল শুনানি স্থগিত রাখে ইসি। বিকেলে কমিশন পেন্ডিং আপিলগুলো শুনানির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নাল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন যুক্তিতর্কে অংশ নেন। তারা আইনের ধারা উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে রায় দাবি করেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বিপক্ষে মত তুলে ধরেন। এ সময় কোনো পক্ষের আইনজীবী না হওয়ার পরও ইউসুফ হোসেনের বক্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে উদ্দেশ্য করে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হু আর ইউ’। ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ছাড়াও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের বেশ কয়েকজন আইনজীবী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনার পরপরই নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক যথাক্রমে ফেনী-১, বগুড়া ৭ ও ৮ এ খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে যে আপিল দায়ের করা হয়েছে তা আইনগতভাবে বিশ্লেষণ করে আমার রায় এই আপিল মঞ্জুরের পক্ষে। আমি এই আপিল মঞ্জুর করলাম। মাহবুব তালুকদারের এসব কথার পর বিএনপির আইনজীবীরা উল্লাস করে কোর্ট রুমের পেছনের দিকে চলে যেতে থাকেন। অপরদিকে, আওয়ামী আইনজীবীরা এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আপনারা ঠান্ডা হয়ে বসেন। এই রায় পুর্ণাঙ্গ নয়, এটি মাত্র একজনের রায়। পরে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম তার রায় ঘোষণা শুরু করেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্তরা নির্বাচন করতে পারেন না। এ কারণে খালেদা জিয়ার আপিল নামঞ্জুর করা হলো। কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীও একই রায় দেন। কমিশনার কবিতা খানমও এই দুই কমিশনারের পক্ষে মত দিয়ে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে নৈতিক স্থখলজনিত কারণে দণ্ডিত হয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) এখন কারাগারে। তার দণ্ড স্থগিত হয়নি। মনোনয়নপত্র বাতিল করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা যে আদেশ দিযেছেন, তার স্পিরিট বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী আপিল নামঞ্জুর করা হলো। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, আমি আমার কমিশনার রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন ও কবিতা খানম- এই তিনজনের পক্ষে রায় দিলাম। এই আপিল আবেদন মঞ্জুর হয়নি। পরে সচিব বলেন, ৪-১ ভোটে এই আপিল নামঞ্জুর হলো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যবিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করা হয়। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, একাদশ সংসদ নির্বাচনে  ৩০০ আসনে ৩ হাজার ৬৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে তার মধ্যে ৭৮৬টি মনোনয়ন অবৈধ বলে ঘোষণা করে বাতিল করেন। সোমবার  থেকে নির্বাচন কমিশন এসব বাতিল মনোনয়নের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ শুরু করে। গত দুই দিনে ৩১৮ জন প্রার্থী কমিশনে আপিল করেছেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসিবুল/রফিক