নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশকে ধ্বংস করতে ‘পরিকল্পিতভাবে’ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে- অভিযোগ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, এখন সেই ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
এর বিরুদ্ধে জেগে উঠতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে সবাইকে জেগে উঠতে হবে।’
রাজধানীর লেডিস ক্লাবে মঙ্গলবার ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘যারা দেশকে ভালোবাসেন, নিজেকে ভালোবাসেন, পরিবারকে ভালোবাসেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মান করেন, তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সজাগ হতে হবে। তবেই দেশে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, শিক্ষা, মানবাধিকারসহ সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে। নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে।’
এই সরকারের বিদায়ের জন্য রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার আহ্বান জানান তিনি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিজিবিকে শেষ করে দিয়েছে- দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এখন মিয়ানমারের সঙ্গেও পারে না। আগে এই বাহিনী অনেক চৌকস ছিল। মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিবির সদস্যকে ধরে নিয়ে যায়। দেশের সম্মান আর কোথায় রেখেছে?’
তিনি বলেন, এ সরকার পুলিশ বাহিনীকে শেষ করে দিয়েছে। সব প্রতিষ্ঠান শেষ করে দিয়েছে। সীমান্তে প্রতিনিয়তই মানুষ খুন, গুম হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করার কেউ নেই। এই অপদার্থ সরকার প্রতিবাদ তো করেই না, কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়।
দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘সীমান্তরক্ষী বাহিনী আর নেই। জানি না, সীমান্তে তাদের অবস্থান আদৌ আছে কি না। এরা শুধু দেশের ভেতরে নিজেদের মানুষকে গুলি করতে পারে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি এ দেশের মানুষের ওপরই ব্যবহার করা হয়।’
পুলিশের কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘এই বাহিনীর খুবই দুরবস্থা। ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি চলছে। সবাই নয়, কিছু কিছু পুলিশ সরকারের লাই (সমর্থন) পেয়ে আজকে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতির ধার ধারে না। বিচারের পরোয়া করে না। কারণ তারা জানে, তাদের কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। যখন ইচ্ছে মানুষ ধরছে, চাঁদা চাইছে, গুম করছে, খুন করছে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘জোর করে ক্ষমতায় বসে থাকা সরকারের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে কথা বললেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। আজ জাতীয় সংসদে কোনো আলোচনা হয় না। এটা গান-বাজনার আসর হয়ে গেছে। সংসদে এখন কোরাম হয় না। বিরোধী দল বলে সেখানে কিছু নেই। সংসদে বির্তক করার এজেন্ডা থাকে না। এর মধ্য দিয়ে সংসদ সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে গেছে।’
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সব দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিএনপি নেত্রী।
তবে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। এটি অপদার্থ, অকার্যকর নির্বাচন কমিশন। তাদের সত্য কথা বলার সাহস নেই।
কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই তার নামে মামলা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। প্রশাসনসহ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্য লোক ডিঙিয়ে দলীয় লোকদের বসানো হচ্ছে- দাবি করেন বিএনপি প্রধান।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক টেবিলে ইফতার করেন মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অন্যদের মধ্যে এলডিপির অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আমীনুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামা ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, মুসলিম লীগের এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রুহুল আলম চৌধুরী, আহমেদ আজম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০জুন ২০১৫/রেজা/বকুল/কমল কর্মকার