রাজনীতি

রায়ে হতাশ ও বিস্মিত বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের চুড়ান্ত রায়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের  চৌধুরীর ফাঁসি বহাল রাখায় হতাশ, বিষ্মিত ও মর্মাহত হয়েছে বিএনপি।

 

দলটি মনে করে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন এবং তিনি ন্যায়বিচার লাভ করেননি। বিচার প্রক্রিয়ায় আইনি স্বচ্ছতার অভাব এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে রাজনৈতিক চাপ ছিলো বলেও দাবি করেছে বিএনপি।

 

বুধবার বিকেল ৫টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

 

তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযুক্ত হওয়ায় আমরা বিস্মিত । তার আইনজীবীদের মতো আমাদের দলও মনে করে তিনি ন্যায় বিচার লাভ করেননি। অন্যায্যভাবে তাকে মৃতুদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে । আমরা এই রায়ে সংক্ষুব্ধ ও সত্যিই মর্মাহত।’

 

বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত রায় বহাল রাখায় আমরা হতাশ, বিস্মিত ও বেদনাহত হয়েছি।’

 

সালাহউদ্দিন কাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন দাবি করে রিপন বলেন, আমাদের দল আরো মনে করে, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচারে আইনি স্বচ্ছতার অভাব ও নানা ক্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে।’

 

প্রসঙ্গত, সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা বহাল রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।

 

এ বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

 

চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতনচন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুন করার চার অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী যাবতীয় মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো বা তাদের অপরাধের বিচারের ব্যাপারে শুরু থেকেই বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট । আমরা সর্বদা এ বিচারের পক্ষে ।’

 

তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম-এই বিচারের প্রক্রিয়া হতে হবে সকল রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপমুক্ত পরিবেশে, স্বচ্ছ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদন্ডের ওপর ভিত্তি করে। এটা কোনোভাবে যেন কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসার শিকার না হন এবং অভিযুক্তদের প্রতি যেন ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হয়।’

 

বিএনপির এই মুখপাত্র বলের, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত ছিলো । তৎসত্ত্বেও আমরা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের প্রতি বরাবর আস্থা রেখে এসেছি।’

 

তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এদেশের একজন জনপ্রিয় ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ । তাকে ছয় বার জাতীয় সংসদে তার নিবার্চনী এলাকার জনগন প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন । দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তার কন্ঠ ছিলো সুউচ্চ।’

 

রিপন বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী যেসব অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তিনি তার সংশ্লিষ্টতা সব সময় অস্বীকার করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি যে দেশে ছিলেন না, এর স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদিও মাননীয় আদালতের বিবেচনায় উপস্থাপন করেছিলেন। ওই সময়ে দেশে তার অনুপস্থিতির দাবির স্বপক্ষে তিনি দেশে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিককেও স্বাক্ষী মেনেছিলেন । কিন্তু বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি ।’

 

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পৃথিবীর বহুদেশে অনেক দণ্ডাদেশের পর পযার্লোচনায় এসেছে-ভিকটিমদের প্রতি কাযর্কর করা অনেক রায় ক্রটিপূর্ণ ছিলো।

 

বাংলাদেশের ইতিহাসে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেওয়া রায় যেন ভবিষ্যতে একটি ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ এর ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত না হয় । সেজন্য প্রত্যাশা করবো, এই রায়ের রিভিউ চলাকালে ভবিষ্যতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ন্যায় বিচার থেকে যেন বঞ্চিত না হন।’

 

রিপন বলেন, বিএনপি বরাবরই বিচার বিভাগের প্রাজ্ঞতা ও বিচক্ষনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক চাপের উর্ধ্বে থেকে সুবিচার প্রত্যাশা করে।

 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, এম এ মালেক, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিতি ছিলেন।রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুলাই ২০১৫/রেজা/নওশের