রাজনীতি

‘জামায়াতের সাথে দোস্তি করে জঙ্গি প্রতিরোধ হবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘জামায়াত-শিবিরকে প্রতিষ্ঠিত ও তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুরক্ষিত রেখে, তাদের সাথে দোস্তি করে, জঙ্গিবাদকে প্রতিরোধ করা যাবে না। কারণ, জঙ্গিবাদের সামনে-পেছনে রয়েছে এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।’

 

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার কক্ষে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশা উপ-পরিষদের সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

 

‘ইসলামের আলোকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হাসান তওফিক ইমাম সভাপতিত্ব করেন। সেমিনারে আলেমা-ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

 

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন।

 

সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জামায়াত-শিবিরের উত্থানের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতের যে বিভিন্ন গ্রুপগুলো উঠে এসেছে, এরাই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিভিন্ন নাম গণহত্যা চালিয়েছে।১৬ ডিসেম্বরের পর এরা কোথায় গেল? এদের অনেকে সরাসরি পাকিস্তানে চলে গেছে। অনেকে ব্রিটেনে চলে গেছে। অনেকে আমেরিকায় চলে গেছে। আবার অনেকে দেশের মধ্যেই ঘাঁপটি মেরে থেকে গেছে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদের সকলকে নিয়ে এলো। এদের সকলকে নিয়ে অদ্ভুত জিনিস সৃষ্টি করল। সেটা হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এটা আর কিছুই না- বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ধারা।’

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে এইচ টি ইমাম আরো বলেন, ‘তার স্ত্রীর (খালেদা জিয়া) সময়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে ফ্রিডম পার্টি গঠন করা হলো। এটাও জঙ্গিবাদের অংশ।’

 

বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘পাকিস্তান কখনো মনে-প্রাণে বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। সেই জিনিসটা এখন আরো প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। তাদের পার্লামেন্টে একটি স্বাধীন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আর তাদের সাথে সুর মিলিয়ে এই দেশে (বাংলাদেশে) কারা কথা বলছেন? এগুলোর মিল খুঁজলেই জঙ্গিবাদের সূত্র পাওয়া যায়। জঙ্গিদের লক্ষ্য হচ্ছে অরাজকতা সৃষ্টি করে তোলপাড় সৃষ্টি করা। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমা দেওয়া। আর সবগুলোরর ক্ষেত্রে একটি নাম ‘আইএস’ ব্যবহার করা। তাই যতক্ষণ বাংলাদেশ থেকে মওদুদীবাদীদের উৎখাত করতে না পারি, জঙ্গিবাদ উৎখাতে এদের শিক্ষা বন্ধ করতে না পারি, তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’

 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলার কোনো জায়গা নেই। সংস্কৃতিচর্চা হয় না। শুধু কতগুলো ফোরাম আছে। এগুলোর কর্মকাণ্ড নেই। তাই এখন অন্যান্য যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে। এখন খাতিরের সময় না। প্রশ্রয় দেওয়ারও দরকার নেই।’

 

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশে এটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর সামনে জেএমবি-হরকাতুল জিহাদ। পেছনে হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। আর এটাকে সার্টিফিকেশন দেওয়ার জন্য হচ্ছে আইএস। কারণ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এটিকে আইএস নাম দেওয়া হচ্ছে। যাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠি আইএস ইস্যুতে বাংলাদেশে নাক গলাতে পারে।’

 

শোকালিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ জামায়াত নিষিদ্ধে সরকারের ধীর নীতির সমালোচনা করে বলেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধে বিলম্ব করছেন কেন? অনেকে বলছেন, নিষিদ্ধ করলে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাবে। তাদের আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যাওয়ার বাকি আছে নাকি? এরা এখন বাইরের সুবিধাও নিচ্ছে, আন্ডার গ্রাউন্ডের সুবিধাও নিচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রেখে, জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত রেখে, জঙ্গিবাদকে প্রতিরোধ করা যাবে না।’

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৬/এনআর/রফিক