রাজনীতি

প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে দেখে আলোচনায় আসুন : ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবদেক : ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

রোববার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এর আয়োজন করে বিএনপি।

 

আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালী করতে প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির ২০টি প্রস্তাব ও সুপারিশ তুলে ধরেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

 

তবে প্রস্তাবকে অন্তঃসারশূন্য আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমেই নতুন ইসি গঠন হবে।

 

মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বারবার জাতীয় নেতার মতো এগিয়ে এসেছেন। এবারও অবাধ নির্বাচনের আয়োজনের স্বার্থে নিরপেক্ষ ইসি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই প্রস্তাব আলোচনার ভিত হতে পারে। এটা নিয়ে কথা বলতে পারি। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

 

তিনি বলেন, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণ হচ্ছে, তারা জানে যদি সত্যিকারের সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে তারা কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেজন্যই প্রস্তাবকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

 

ইসি পুনর্গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার দেওয়া প্রস্তাবে প্রত্যেকটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে কোনো কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এই আলোচনা হতে পারে ভিত। খালেদা জিয়া এ কথা কখনো বলেননি যে, এটাই চূড়ান্ত। বলেছেন, এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে, যাতে একটি সমাধানে পৌঁছানো যায়।

 

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব বিদেশি কূটনীতিকরা সমর্থন এবং প্রশংসা করেছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

 

ইসি নিয়ে বিএনপি নেত্রীর প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখে এর সমাধানে সরকারকে আলোচনার আহ্বান জানান তিনি।

 

‘সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই, প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করে সংলাপ করুন। বিরোধীদলগুলোকে ডাকুন। সমস্যার সমাধান করুন। অন্যথায় এদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না’, বলেন মির্জা ফখরুল।

 

তিনি বলেন, ‘অহংকার পরিহার করুন। মানুষের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষ মুক্তি চায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়। হত্যার রাজনীতি থেকে পরিহার চাই।’

 

প্রস্তাব নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিবেদন হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কিছু কিছু পত্রিকা যারা এক-এগারোর সরকারকে নিয়ে আসার ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালন করেছেন, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমি তাদের বলতে চাই, কোন কোন জায়গায় সমস্যা আছে খুঁজে বের করুন। এরপর সমাধানের কথা বলুন।’

 

বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন, ‘প্রস্তাবের ওপর ভবিষ্যতে অন্য কোনো ফোরামে আরো আলোচনা হবে। যারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান এগিয়ে আসেন। দেশকে বাঁচানোর জন্য মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব নিয়ে কথা বলুন।’

 

ফখরুল বলেন, ‘একটি দল অন্যায়ভাবে, বেআইনীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সব গুছিয়ে নিচ্ছে। তারা সংবিধানকে তাদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে, গণতন্ত্রকে তাদের মতো করে ব্যাখ্যা করছে, প্রশাসনকে তাদের পক্ষে ব্যবহার করছে। সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের মতো করে কব্জায় নিয়ে চেষ্টা করছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য।’

 

তারেক রহমানকে তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে অভিহিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তরুণরা যে ধরনের রাজনীতি দেখতে চায় তারেক রহমান সেই রাজনীতির ধারক। তারেক রহমান শুধু জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার পুত্র নন, তিনি ১৬ কোটি মানুষের মাথা উচু করে ধরার নেতা। ’

 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ নভেম্বর ২০১৬/রেজা/সাইফ