রাজনীতি

‘আমার দুঃখ, তাকে রক্ষা করতে পারিনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গতকাল  বৃহস্পতিবার আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। কিন্তু এ অবৈধ সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কর্মসূচির মধ্যে অতর্কিতভাবে প্রবেশ করে এক ছাত্র নেতাকে বিভৎস ভাবে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। সেই ছেলে নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। কিন্তু আমার দুঃখ এই যে, আমি তাকে রক্ষা করতে পারিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ব্যথা ও ক্ষোভ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই সরকার আজকে বাংলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। যেভাবেই হোক, ভয়াবহ দুঃশাসন চালিয়েও তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। এখানে গণমানুষের কোনো অধিকার নেই। জীবনের নিশ্চয়তা নেই। এ সঙ্কট শুধু বিএনপির নয়, ২০ দলের নয়। এ সঙ্কট সমস্ত জাতির, বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্কট।’ খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি সম্পূর্ণ জাল নথির উপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ, তাদের (সরকার) মূল উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। যাতে করে তারা আবারও ক্ষমতায় যেতে পারে। এ ধরনের মামলায় সাজা হওয়ার পরেই জামিন পাওয়া ন্যূনতম নাগরিক অধিকার। সেখানেও তারা হস্তক্ষেপ করেছে। সুতরাং সেই অধিকার থেকে খালেদা জিয়া বঞ্চিত হয়েছেন।’ সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যদি ক্ষমতায় যেতে চান তাহলে সমস্ত রাজবন্দী ও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। যে নির্বাচন পরিচালনা করবে একটি নিরপেক্ষ সরকার। তাহলেই আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনতে আমরা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবো না- নির্বাচনের কমিশনের এ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকারের যে মূল এজেন্ডা, সরকার যা চাইছে, সেই কথাটা বলেছেন নির্বাচন কমিশন। আপনারা (ইসি) করবেন না, সেটা আমরা জানি। আপনাদের (ইসি) ওখানে বসানো হয়েছে আওয়ামী লীগকে আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য। এটা আমরা বলেই যাচ্ছি। এর মধ্যে আমাদের কোনো রাগ নেই।’ আওয়ামী লীগের ৭ মার্চ পালন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) ৭ মার্চ পালন করলেন। খুব ভালো কথা। সরকারি টাকা খরচ করে, বিলবোর্ড লাগিয়ে এবং ঢাকা নগরী বন্ধ করে ৭ মার্চ পালন করলেন। তাহলে আমাদের সমাবেশ করতে দিচ্ছেন না কেন? আমাদের সভাগুলোতে বাধা দিচ্ছেন কেনো? আপনারা বলছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। আমাদের প্রত্যেকটা কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। কিন্তু প্রত্যেকটা কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছেন। অফিস থেকে বের হতে দেন না। আর বলবেন, আপনারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেন- এটা জনগণের সাথে প্রতারণা। কিন্তু প্রতারণা করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’ কোথায় গণতন্ত্র- এ প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি। কিন্তু সেই গণতন্ত্র কোথায়। অধিকার কোথায়? মানুষের ন্যূনতম যে নাগরিক অধিকার সেটা নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য এসেছে। তারা এসেছে মানুষের অধিকার ও আমাদের অর্জনগুলোকে ধ্বংস করবার জন্য। আর সেটা তারা সার্থকভাবে করতে যাচ্ছে।  খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে যারা নির্বাচনের কথা ভাববে তারা অলীক স্বর্গে বসবাস করবে। দেশনেত্রীকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। দেশনেত্রীকে নিয়েই আমরা নির্বাচনের সামনে যাবো। আমাদের ঐক্যকে আরো দৃঢ় করতে হবে। জনগণ, সংগঠন ও সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐক্যে দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’ আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংগঠনের মহাসচিব মোস্তাফা জামাল হায়দার, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান এম এ রকিব, ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তাফা ভুইয়া, কাজী জাফরের মেয়ে কাজী জয়া উপস্থিত ছিলেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মার্চ ২০১৮/মামুন খান/শাহনেওয়াজ