জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : শ্রমিকদের আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নেই। আগামী সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। আমরা আগামী নির্বাচনে শ্রমিকদের মনোয়ন দেব। মহান মে দিবস উপলক্ষে সোমবার কুড়িল বিশ্বরোডে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকল্প শ্রমজীবীধারা আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। এ সময় তিন সরকারি কর্মচারীদের মতো শ্রমিক ও বেসরকারি কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার দাবি জানান। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক সমীক্ষা তুলে ধরে বি চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গত ৫ বছরে ৪ হাজার ১০০ পোশাক শ্রমিক নিহত এবং ৭ হাজার জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনা অবশ্যই বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, আর ক্ষতিপূরণের পরিমাণও খুব কম। একজন সরকারি কর্মচারী অথবা একজন পুলিশ মারা গেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা পায়। এটা হলো দুই রকম বিচার। বি চৌধুরী বলেন, অপরাধ করলে বিচার করতে হবে। কিন্তু রানা প্লাজার মতো এত বড় দুর্ঘটনার বিচার এখনো হয় নাই। নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ কী দেওয়া হয়েছে তাও জনগণ জানে না। মালিকের অবহেলায় এই দুর্ঘটনা হয়েছে। সুতরাং এর দায়দায়িত্ব মালিককেই নিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো আপোশ চলবে না। বিচার বিলম্বিত হলে ন্যায়বিচার হবে না। তাই আমরা রানা প্লাজার ঘটনাসহ যতো দুর্ঘটনা হয়েছে সবগুলোর দ্রুততম বিচার চাই। ঢিলেঢালা বিচার চলবে না। প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শ্রমিকরা ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছেন। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের মতো সুযোগ-সুবিধা তারা পান না। শ্রমিক শ্রেণির সমস্যা সমাধান করতে হলে তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করে গণতন্ত্র আনতেই হবে। আর গণতন্ত্র আনতে হলে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন দিতে হবে। সাম্প্রতিক বাস দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে বি চৌধুরী বলেন, রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে বাসের চাকায় মানুষের হাত-পা চলে যায়। এর মধ্যে দুইজন মারাও গেলেন। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোনো আইন প্রণয়ন করছে না বা আইন সংশোধনও করছে না। আগামীতে প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বি চৌধুরী বলেন, সরকার প্রহসনের নির্বাচন করার অপচেষ্টা করছে। সরকার যাতে প্রহসনের নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকার যেভাবে চক্রান্ত করছে, তাতে মনে হয় না যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এর আগে একটা নির্বাচন করল, ১৫৩ জন বিনাভোটে নির্বাচিত হলো। বাকি ১৪৭ জন সদস্য হয়ে গেলেন মাইনরিটি। এই মাইনরিটির সংসদ দিয়ে তারা সংবিধান সংশোধন করলেন যা অন্যায় এবং বেআ্ইনি। বেআইনিভাবে নির্বাচন করে তারা রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ওই নির্বাচনের আগে তারা বলেছিলেন, এটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন। তারা কথা রাখে নাই। সুতরাং যে সরকার কথা রাখে না তাদের অধীনে আগামী নির্বাচন হাসির খোরাক ছড়া আর কী হতে পারে? ‘এখন তারা বলছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভাঙবে না। তাদের তথাকথিত সংসদ সদস্যরা এমপি পদের মর্যাদা ও ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকবে। সরকার যাতে কোনো প্রহসনের নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমিক শ্রেণি ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে,’ বলেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বিকল্প শ্রমজীবীধারার সভাপতি আইনুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব আলী, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউসুফ, ওয়াসিমুল ইসলাম, জানে আলম হাওলাদার, যুবধারার ওবায়েদুর রহমান মৃধা, আসাদুজ্জামান বাচ্চু, মাহফুজুর রহমান, বি এম নিজাম, শাহজাহান সিরাজ সবুজ, শাহ আলম, আরিফুল হক সুমন, তাসলিমা, সীমা, রবিউল, শেখ রাসেল প্রমুখ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ মে ২০১৮/নঈমুদ্দীন/রফিক