রাজনীতি

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শনিবার রাজধানীর ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যদি আর একবার ক্ষমতায় আসে, কী হবে বুঝতে পারেন? ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বাংলাদেশে। এই বিএনপি আপনাদের-আমাদের বাড়িছাড়া করবে। মনে কি আছে, গ্রামছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মীরা এই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বছরের পর বছর লঙ্গরখানায় দুঃসহ জীবন যাপন করেছে? মনে কি আছে, বরিশাল, ভোলায়, গোপালগঞ্জে কতো দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছে? দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছে এ দেশের সংখ্যালঘুরা। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখনো ঘরের মধ্যে ঘর আছে। মশারির মধ্যে মশারি আছে। শাহজাহান ভাই আপনাদের একত্রিত করেছেন। কিন্তু যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এবং যে বিষবৃক্ষ দেশব্যাপী ডালপালা বিস্তার লাভ করেছে এর মূল উৎপাটন করতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ সময় সম্মেলনের সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো— মেধার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হলেও জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তান যেন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে যারা সরকারের ভেতরে থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে বরখাস্ত করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও জামায়াত-শিবিরের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুণ্নকারী, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের নিয়ে কটাক্ষকারীদের দেশদ্রোহী হিসেবে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০০১ এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের তাণ্ডবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কোটা সংস্কারের নামে অগ্নিসংযোগ, নাশকতা, অরাজকতা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মদান, ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম আর লক্ষ লক্ষ বাড়ি-ঘর ও অর্থ সম্পদ ধ্বংসের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে অর্জন করেছি আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতাকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপি জামায়াত আজ সোচ্চার। তারা শেখ হাসিনাকে হত্যা ও তার সরকারকে উৎখাত করতে চায়। এমন এক পর্যায়ে ২০১৫ সালে শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে বিএনপি জামায়াতের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেছিল। আবার নতুন করে তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমাদের সকলকে আবার একত্রিত হয়ে এ ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হবে। বক্তারা বলেন, গত ৮ এপ্রিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের নামে ছাত্র আন্দোলন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে অশ্লীল ভাষায় স্লোগান দিয়েছে। ফেসবুকে কটুক্তি ও অশ্লীল ভাষায় মন্তব্য করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অসম্মান করবে তা মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিতে পারে না। এছাড়া, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার স্বার্থে শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৯ ও ২০ জুলাই সিলেট বিভাগে জনতার অভিযাত্রা। ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে যাত্রা শুরু হবে। এ অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদর প্রাক্তন চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ, কবির আহমেদ খান, ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, সালাউদ্দিন আহমদে, জামুকার সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর ওয়াকার হাসান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রাক্তন সচিব মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক মিয়া। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুলাই ২০১৮/নাসির/রফিক