রাজনীতি

কাদেরের পক্ষে অধিকাংশ এমপি, কোণঠাসা রওশন পন্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা কে হবেন তা নিয়ে চলছে দলটির মধ্যে মতবিরোধ। দলের নির্বাচিত ২২ জন সাংসদের মধ্যে ১৫ জনই চাইছেন দলটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে। আর বাকিরা চাইছেন রওশন এরশাদকে।

ইতোমধ্যে মঙ্গলবার এই বিষয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধী নেতা করে ১৫ জন সংসদ সদস্যের সম্মতিপত্রসহ সংসদে চিঠি দিয়েছে রাজনৈতিক দলটি।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বিরোধীদলীয় নেতার পদটি নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা বিরোধ। এমনকি আশঙ্কা রয়েছে দল ভাঙারও।

এদিকে জাতীয় সংসদে জিএম কাদেরের পক্ষে চিঠি দেয়া হলেও রওশন এরশাদ পন্থীরা বসে নেই। তারাও স্পিকার বরাবর জিএম কাদেরের দেয়া চিঠি গঠনতন্ত্র সম্মত নয় বলে বুধবার বিকেলে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন। স্পিকার বরাবর রওশন এরশাদের চিঠি পৌঁছে দেন রওশনপন্থী বলে পরিচিত ফখরুল ইমাম। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার রওশন এরশাদ তার গুলশানের বাসভবনে বেলা ১১টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।

জানা গেছে, জিএম কাদের বিষয়ে স্পিকার বরাবর চিঠির খবর রওশন এরশাদের কাছে পৌঁছলে তিনি দলীয় এমপিদের সন্ধ্যায় নিজ বাসায় আসতে বলেন। কিন্তু ২২ জন এমপির মধ্যে মাত্র ৪ জন তার বাসায় হাজির হন। পরে সেই চারজনকে নিয়েই বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, পার্টির সংসদীয় কোনো সভা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। রওশন এরশাদ আগামী ৮ তারিখে সংসদে আমাদের সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন। সেখানেই আমরা বিরোধীদলের নেতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।

এদিকে রওশন পন্থীরা কোনঠাসা হয়ে পড়াতে উজ্জীবিত জিএম কাদের পন্থীরা। বিশেষ করে মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দফা অনেককে ফোন করেও কাছে পাননি রওশন এরশাদ। এ মুহুর্তে তার সঙ্গী হয়েছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মজিবুল হক চুন্নু ও ফখরুল ইমাম।

এদিকে তৃণমূলে খবর নিয়ে জানা গেছে, পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে নেতাদের মধ্যে এই বিভেদের কারণে অস্থিরতায় ভুগছে পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই পার্টিতে দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্ব অনেকটাই স্পষ্ট। এরমধ্যে একাধিকবার রওশন ও জিএম কাদের রওশনের গুলশানের বাসভবনে একান্তে কথা বলেন। কিন্তু দুইদিন না যেতেই না যেতেই এই ইস্যুতে আবার তাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হতে থাকে। জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলে এর বিরোধীতা করেন রওশন। আসন্ন সংসদ অধিবেশনেই বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হবার কথা। কিন্তু এর আগেই পার্টির অধিকাংশ এমপি জিএম কাদেরকে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দেয়ায় চরম নাখোশ হয়েছেন রওশন এরশাদ।

এ বিষয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘পার্টির সকল নেতাকর্মীই চান পার্টির নেতার পাশাপাশি রিবোধী দলের নেতা হোক জিএম কাদের। তার সাথে পার্টির তৃণমূলের যে সম্পর্ক রয়েছে তাতে তিনি বিরোধীদলের নেতা হলে দল উপকৃত হবে।’

পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, ‘পার্টিতে পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা বিভেদ কাম্য নয়। যত দ্রুত সম্ভব তা মিটিয়ে ফেলা উচিত। এতে পার্টি, পার্টির নেতাকর্মী ও দেশ উপকৃত হবে।’

সার্বিক বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘বিরোধী দলীয় নেতা মনোনয়ন প্রশ্নে জোর করে কিছু করা হয় নি। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চিঠি দেয়া হয়েছে। পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠক না করায় বিতর্ক উঠেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরশাদ সাহেব যখন বেঁচে ছিলেন তিনিও কিন্তু এভাবে বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছিলেন, আমাকে বিরোধী দলীয় উপনেতা করেছিলেন। পরে আমাকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে উপনেতা করা হয়, তখনও কিন্তু পার্লামেন্টারি পার্টির কোনো মিটিং করা হয় নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ফোনে সংসদ সদস্যদের জিজ্ঞেস করেছি। তারা সম্মতি দিয়েছে। লিখিত দিতে বলা হলে ১৫ জন সম্মতিপত্র দিয়েছে। ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন সম্মতি দিলে আর কিছু লাগে না। তাই অন্যদেরকে বলা হয়নি। এখন আরও অনেকে দিতে চাচ্ছে। প্রয়োজন নেই বলে নেওয়া হচ্ছে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্য কেউ পার্লামেন্টারি পার্টির সভা ডাকতে পারে না। ডাকতে হলে আমিই ডাকবো।’

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/হাসিবুল/শাহনেওয়াজ