রাজনীতি

‘আইন লঙ্ঘন করে ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদককে পদচ্যুত’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আইন লঙ্ঘন করে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে পদচ্যুত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার নয়া পল্টনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, ছাত্রলীগ ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের সহযোগী থাকলেও নতুন ‘দ্য রিপ্রজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার’ (আরপিও) বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আরপিও অনুযায়ী ছাত্রলীগ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রেও সে কথাই বলে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৫ (১) ধারা অনুযায়ী ছাত্রলীগ তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মাত্র। এদিক থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে কোনো আদেশ-নির্দেশ দেয়া বা তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারা কেবল পরামর্শ দেয়ার অধিকার রাখে। বিএনপির মত আওয়ামী লীগও আরপিও অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও এক সময়ের ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল আহমেদের রেফারেন্স টেনে রিজভী বলেন, ৫ আগস্ট ২০১৬ একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে ছাত্রলীগকে আমরা কিছু বলতে পারি না। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের শুধুমাত্র ভ্রাতৃপ্রতীম  সংগঠন। জনপ্রতিনিধিত্ব (আরপিও) আইন অনুযায়ী তারা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। ফলে ছাত্রলীগকে কোনো নির্দেশ দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। তবে আমরা পরামর্শ দিতে পারি মাত্র।’

রিজভী বলেন, বাস্তবে আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন? গত শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে শেখ হাসিনা তাদের গঠনতন্ত্র ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে বাইফোর্স ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সেক্রেটারি রব্বানীতে পদচ্যূত করেছেন। সে কথা স্বীকার করে পরদিন গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভার পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করছেন। ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন সম্পন্ন করতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

এতে সুস্পস্টভাবে প্রমাণ হয় নিয়মনীতি, বিধিবিধান আইন-কানুন সব লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছেন। এতে কি আরপিও ভঙ্গ হয় না?

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কাউন্সিল ও নেতৃত্ব নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে ছাত্রদলের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। কিন্তু কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাত্র দুদিন আগে নিম্ন আদালত থেকে তড়িঘড়ি করে কাউন্সিলের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে থামিয়ে দেয়া হয় ছাত্রদলের কাউন্সিল। কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থন করার কোনো সুযোগ না নিয়ে যেভাবে দ্রুততার সাথে রাতের অন্ধকারে আদালতের এই আদেশ বের করা হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয়, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের সর্বোচ্চ মহল জড়িত। এমনকি বিএনপি ও তার নেতাদের ওপরে অন্যায্য ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আদেশ জারি করা হয়েছে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই। এটা শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক রাজনীতির আরেকটি কলঙ্কজনক ও নজিরবিহীন অধ্যয়।

ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘এখন যদি কেউ এই অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং শোভন-রাব্বানীর পদচ্যূতিকে চ্যালেঞ্জ করে ঐ একই ঢাকা চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে একই ধারায় একটি ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে, তবে বিএনপির ওপরে যেমন শোকজ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর একই রকম স্থগিতাদেশ এবং শোকজের আদেশ দিতে পারবে কি?’

 

ঢাকা/সাওন/সাইফ