রাজনীতি

বিএনপি সবসময় বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারে বিরোধিতা করেছে: কাদের

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যকাণ্ডের যাতে সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার না হয়, সেজন্য বিভিন্ন সময়ে জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি বিরোধিতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং বনানী কবরস্থানে আগস্টে নিহতদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।   ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ কথা আর কারও বুঝতে বাকি নেই জাতির পিতাকে হত্যার মূল লক্ষ্য ছিল একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। আর স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পথচলা থামিয়ে দেওয়া। তারা একাত্তরের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল, কারণ তিনি তখনকার পরাশক্তি তথা বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে এক দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’

শুধু বাংলাদেশ নামটি অক্ষত রেখে চিরায়ত পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালনার লক্ষেই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগস্ট হত্যার পরিকল্পনাকারীদের পরামর্শে খুনি মোশতাক কুখ্যাত ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিল। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীতে ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশসহ সব অবৈধ ও অসাংবিধানিক বিষয়কে বৈধতা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। এরপর প্রায় দুই যুগ ধরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ থাকে।’

‘পরবর্তী সরকার ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করতে দেয়নি। তারা হত্যকারীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল। ১৯৯১ সালে সংসদে ইন্ডেমনি্টি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি তুলেছিলাম। বিএনপি তখন বলেছিল এ অধ্যাদেশ বাতিল করা যাবে না। কারণ একটি পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে। আমরা বারবার বলেছি এটি একটি সাধারণ আইন, যা সংশোধনের মেজরিটি ভোট দিয়ে বাতিল করা যায়। বিএনপির ৫ বছরের মেয়াদে জাতির পিতার হত্যার বিচারে কোনো কাজ করেনি। বরং খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি পরবর্তী সময়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি রশিদকে তারা বিরোধী দলীয় নেতা বানিয়ে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছিল।’

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে কুখ্যাত ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এভাবে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করেছিলাম। কিন্তু আবারও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিচারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বহুল প্রতিক্ষীত বিচার শেষ হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন খুনি বিদেশে পলাতক থাকায় সম্পূর্ণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি। অনেকেরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। যে পাঁচজন বিদেশের মাটিতে পালিয়ে রয়েছে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেগুলোর সহযোগিতা চেয়েছি। আমাদের প্রয়াস এবং কূটনীতির উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়েছিল, একই সঙ্গে স্তম্ভিত হয়েছিল। ইল্যান্ডের স্যার মাস ইউলিয়ম ইউসির নেতৃত্বে বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সুষ্ঠু তদেন্তের স্বার্থে একটি তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছিল। তারা বাংলাদেশে আসতে চাইলে জিয়াউর রহমান তাদের ভিসা দেয়নি।’

১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির সবচেয়ে কলঙ্কের দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমের কিছু দুষ্কৃতিকারী মহান এ নেতাকে হত্যা করে। এবারের শোক দিবসটি আমাদের কাছে বেশি তাৎপর্যময়, কারণ এ বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। যারা ভুয়া জন্মদিনে কেক কাটতো এবার না কেটে জাতিকে এক অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে। এটি তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় বলে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

তিনি ১৫ আগস্টে নিহত সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।