রাজনীতি

‘এই বুঝি দমটা বের হয়ে যাবে’

একুশে আগস্ট বর্বরোচিত হামলায় শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বয়ে বেড়ানো আহতদের একজন আওয়ামী লীগ নেতা মো. নাজিম উদ্দিন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় আমার শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। নিজেকে বাঁচাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার শরীরের ওপর দিয়ে যে কত মানুষ গেল বলতে পারব না। মনে হচ্ছে, এই বুঝি দমটা বের হয়ে যাবে।  শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম।’

নাজিম উদ্দিন তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।  বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট)  রাইজিংবিডিকে বলেছেন সেদিনের হামলার নৃশংসতা সম্পর্কে।

‘সন্ত্রাসবিরোধী সেদিনের সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছিল। আপা (শেখ হাসিনা) যাওয়ার আগে আমরা মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখছিলাম। তখন হানিফ ভাই ও মায়া ভাই বললেন, আপা আসছে তোমরা একটু চারপাশ খেয়াল রাখ। আমরা সমাবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে খেয়াল রাখছিলাম চারদিক।  এরই মধ্যে আপা চলে এলেন।  তিনি বক্তব্য রাখলেন।  তার বক্তব্যের শেষে হঠাৎ করেই প্রথম গ্রেনেডটা ফুটলো।  কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি এটা গ্রেনেড হামলা।  কারণ একটা রাজনৈতিক সমাবেশে এভাবে হামলা হবে এটা আমাদের কল্পনাতেই ছিল না।’

নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘যখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেনেড ফুটল তখন বুঝতে দেরি হলো না এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যে হামলা হয়েছে।  আর এখানে কেন্দ্রীয় সব নেতারা রয়েছেন।’

‘মুক্তিযুদ্ধে সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কিশোর বয়সে সহায়তা করেছিলাম। তারা তখন শিখিয়েছিল গোলাগুলির সময় শুয়ে পড়তে হয়।  ওই কথা মনে করে আমি সেখানে শুয়ে পড়লাম। আমার শরীরের ওপর দিয়ে যে কত লোক দৌড়াদৌড়ি করলো, শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম।  এর মধ্যে গ্রেনেডের হামলায় আমার শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে।  দমটা মনে হচ্ছিল এই বুঝি বের হয়ে যায়।’

হামলায় অনেকে আহত অবস্থায় নাজিম উদ্দিনের শরীরের ওপর পড়ে যায়। মূলত সে কারণেই বেঁচে যান তিনি।

‘মূলত তাদের জন্যই আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। কারণ আমার শরীরের ওপর থাকায় গ্রেনেড তাদের ওপর পড়েছে।  তবে আমার পা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনও প্রায় একশ স্প্লিন্টার পায়ের মধ্যে আছে।  বামগ্রুদ, চেন্নাই সব সব জায়গায় নেত্রী চিকিৎসা করিয়েছেন।’

সেদিন গ্রেনেড হামলায় অজ্ঞান হয়ে যান নাজিম উদ্দিন। জ্ঞান ফিরলে দেখেন তিনি যুবলীগের অফিসে আছেন।

‘জ্ঞান ফিরলে দেখি আমাকে যুবলীগের অফিসে শুয়ে রাখা হয়েছে। আমাকে একটি ভ্যান গাড়িতে করে আরও দুই তিনজনের সঙ্গে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলো নেতাকর্মীরা। সেখানে গিয়ে দেখি ভয়াবহ অবস্থা।  বারান্দায় লোকে ঠাসা। ডাক্তার নেই। ওখান থেকে পিজি হাসপাতালে গেলাম, সেখানেও গ্রহণ করলো না। এরপর বারডেম হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলাম। তখনই শুনলাম নেত্রী ধানমন্ডি যাওয়ার পথে আক্রমণের শিকার হয়েছেন।  তখন বুঝলাম এখানে আমি নিরাপদ না। এরপর ওখান থেকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলো।  পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।’

এখনও শরীরের ভেতরে থাকা স্প্লিন্টার যন্ত্রণা দেয় জানিয়ে গ্রেনেড হামলায় আহত এই নেতা বলেন, ‘স্প্লিন্টার যেগুলো আছে সেগুলো অপারেশন করে বের করতে গেলে শরীরের খুব ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।’

নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এটা একটা ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও নজিরবিহীন আক্রমণ ছিল। এর সঙ্গে তৎকালীন সরকারের সম্পৃক্ততা ছিল।  আলামত নষ্ট ও মিথ্যা নাটক সাজানোর মাধ্যমে সেটি প্রমাণ হয়েছে।’