রাজনীতি

করোনায় বদলে গেলো আ.লীগের সব আয়োজন-পরিকল্পনা

করোনার কারণে বদলে গেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর আয়োজনসহ আওয়ামী লীগের সব ‘আয়োজন-পরিকল্পনা’।     প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কারণে সবকিছু একপাশে রেখে  মানুষের পাশে দাঁড়ানোই এই বছর আওয়ামী লীগের মূল কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে মুজিববর্ষের কর্মসূচি। তৃণমূলে বেশ কয়েকটি জেলায় সম্মেলন আয়োজনের পরও করোনা কারণে তা স্থগিত করা হয়। যদিও সেপ্টেম্বর থেকে আবারও সীমিত আকারে সেই কর্মকাণ্ড শুরু করছে দলটি।

গত বছরের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পরই দলটি হাত দেয় সাংগঠনিক কাজে। সম্মেলনের আগে ৭৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ৩ জেলার সম্মেলন করা হয়। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করার পর ২৯ জেলা সম্মেলন শেষ করা হয়। চ‌্যালেঞ্জ ছিল সম্মেলনের পর এই কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়া। কিন্তু করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।

৫ মাস রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনার প্রদুর্ভাব দেখা দিলে আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এর আগে মুজিববর্ষের কারণে স্থগিত রাখা সাংগঠনিক কার্যক্রম এপ্রিলে শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছিল দলটি। কিন্তু করোনা  বাংলাদেশেও হানা দেওয়ায় রাজনৈতিক কর্মসূচি স্থগিত করে এই ভাইরাস মোকাবিলায় মাঠে নামে আওয়ামী লীগ।

করোনায় প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশনা মেনে সারাদেশে স্বাস্থ‌্যবিধি মানতে মানুষকে সচেতন করার পাশপাশি সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা। টানা লকডাউনে নিম্নবিত্ত ও সম্বলহীন মানুষের দিকে বাড়িয়ে দেন সাহায‌্যের হাত। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ নিয়ে নেতাকর্মীরা ছুটে যান মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। করোনায়  প্রাণ হারান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটির সাবেক মেয়র বদরউদ্দীন আহমদ কামরান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও সাবেক এমপি হাজী মকবুলসহ সারা দেশের ৫২২ নেতাকর্মী।

করোনায় কৃষকের পাশে করোনায় ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষককে সহায়তা করতে মাঠে ধান কেটে দেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা।  

সাহেদ কর্মকাণ্ডে বিব্রত আ.লীগ করোনা মহামারির মধ‌্যে চিকিৎসা নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা দেশব‌্যাপী আলোচিত হয়।  রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এই নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে ব‌্যাপক সমালোচনা ঝড় ওঠে। সাহেদের মতো অনুপ্রবেশকারীরা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় এই নিয়ে ভবিষ‌্যতে সতর্ক থাকার নির্দেশ আসে দলীয় হাইকমান্ড থেকে।   

করোনায় অনলাইনে সভা-কর্মসূচি করোনার  কারণে সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচির বদলে অনলাইনে বিভিন্ন দিবস ও সামসাময়িক বিষয় নিয়ে ওয়েবিনার করে আওয়ামী লীগ। এসব ভার্চুয়াল সভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। করোনার কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ‌্যমে বক্তব‌্য রাখেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

আ.লীগের প্রথম যৌথসভা সম্মেলনের পর বছরের শুরুতে ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি প্রথম যৌথসভায় বসে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ওইদিন সভা মুলতবি রাখা হয়। পরদিন গণভবনে আবার সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর কিছুদিন পর ৮ মার্চ শনাক্ত হয় দেশে প্রথম করোনা মহামারি।

করোনায় সক্রিয় অনলাইনে কর্মকাণ্ড করোনায় দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে ১৫ এপ্রিল ভিডিও কনফারেন্সের বক্তব‌্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনায় ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও সীমিত কর্মসূচিতে পালিত হয়। এই ইস্যুতে বেশকিছু ওয়েবিনার করে আওয়ামী লীগ।

সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে শুরু সাংগঠনিক তৎপরতা করোনা সংক্রমণের গতি কিছুটা কমলে গত সেপ্টেম্বর থেকে ধীরে ধীরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করে আওয়ামী লীগ। স্বাস্থ‌্যবিধি মেনে ১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় দলের  সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক। ৩ অক্টোবর সীমিত আকারে দলের কার্যনির্বাহী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন সম্মেলনের ১০ মাসের মাথায় ৮ বিভাগে নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়ার পর সাংগঠনিক নেতারা নিজ নিজ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জয়পুরহাট জেলাসহ কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটির। প্রকাশ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের উপ কমিটিগুলোর সদস‌্যদের নামও।

সাংগঠনিক শৃঙ্খলায় নজর স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় বিদ্রোহী প্রার্থী গত কয়েকবছর ধরে আওয়ামী লীগের মাথাব‌্যথার কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাই অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে জোর দিয়েছে দলটি। এজন‌্য নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অতীতে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, ব‌্যাপারে ২৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের আর কখনো নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।  বিদায়ী বছরে ১০টি সংসদীয় উপনির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন শূন‌্য পদ  পূরণ কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন‌্য কয়েকটি পদ পূরণ করেছে আওয়ামী লীগ। বছরের শেষদিকে ৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন দুজন সদস্য নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেন বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)-এর  সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে দলের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ২৫ নভেম্বর সিরাজুল মোস্তফাকে ধর্ম সম্পাদক করা হয়।

বছরের শেষে ভাস্কর্য ইস‌্যুতে মাঠে আ. লীগ বছলের শেষে এসে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক শক্তির অবস্থান ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননার ইস‌্যুতে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশে সক্রিয় হয়ে ওঠেন নেতাকর্মীরা।