রাজনীতি

‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তিই এখন বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ৪৩ বছর সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে এবং সংগ্রাম-লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আজকে ৪৩ বছর পার করে ৪৪ বছরে পড়েছে। এখন বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা এবং গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।

বুধবার ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পনের পর   তিনি এ কথা বলেন।

জনগণের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে নির্বাচন হয় না, নির্বাচন কমিশন একটা সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পুরো প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সার্বিক অর্থে একটি ছদ্মবেশী একদলীয় স্বৈরাচারী ব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বিএনপির ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৫০০এর অধিক আমাদের নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। 

তিনি বলেন, এই অবস্থার পরও বিএনপি আজকে নিসন্দেহে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যখন সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি তখন আমাদের দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  তিনিও অসংখ্য মিথ্যা মামলা নিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন।  আজকে তার নেতৃত্বে আমাদের দল অত্যন্ত সুসংগঠিত। আমরা এই সীমিত পরিসরের মধ্যেও আমাদের দলকে সংগঠিত করছি এবং রাস্তায় জনগণের যে দাবি-দাওয়া আছে তা নিয়ে আন্দোলন করছি।  আমরা আশা করি, সামনের বছর এবং তার পরের বছরও নিসন্দেহে এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারবো তাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে।

জিয়াউর রহমানের কবর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির দুর্ভাগ্য যে, আজকে জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলা হয়।  আমরা পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে তিনি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।  তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে, মুক্তি শুরু হয়েছে।  সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না।

এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক চ্যালেঞ্জ  করেছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা কিনা সেই প্রমাণ দিতে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওনাকে (আ ক ম মোজাম্মেল হক) ওনার চ্যালেঞ্জ নিজেকে গ্রহণ করতে বলেন। উনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ওটা উনি প্রমাণ করুক।  লেট হিম প্রুফ দ্যাট হি ওয়াজ এ ফিড্রম ফাইটার।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)  প্রতিষ্ঠা করেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) বিলুপ্ত করে বিএনপির যাত্রা শুরু হয়। এই দলের মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), কাজী জাফর আহমেদের ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, শাহ আজিজুর রহমানের মুসলিম লীগ, মাওলানা আবদুল মতিনের বাংলাদেশ লেবার পার্টি ও রসরাজ মণ্ডলের বাংলাদেশ তফসিলি ফেডারেশন-এই পাঁচটি দল যুক্ত হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১১টায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান। তারা প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।

দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের উদ্যোগে হেলফ ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময়ের ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালামসহ বিশেষজ্ঞ চিকিতসকরা দুস্থ ও গরীব মানুষদের চিকিতসা পত্র ও বিনামূল্যে ওষুধ পত্র দেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।