রাজনীতি

‘তারেক প্রমাণ করেছে, জিয়া ও খালেদা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং চক্রান্তের সঙ্গে যে জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া জড়িত তা ‘পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি’ স্লোগান দেওয়ার মাধ্যমে তারেক রহমান প্রমাণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া স্লোগান দেয়—পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি। এটার মধ্য দিয়ে সে এটাই প্রমাণ করেছে যে, তার বাবা পাকিস্তানের দালাল ছিল। তার মাও পাকিস্তানি দালাল হিসেবেই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলেছিল। ইতিহাস মুছে ফেলে দিয়েছিল। জাতির পিতার নামটি মুছে ফেলেছিল। কাজেই এটা তো খুব স্বাভাবিক—তারা তো এই ধরনের স্লোগান দেবেই।’

‘পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাই তো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। স্বাধীন জাতি হিসেবে যে একটা মর্যাদা আছে, সেটাই তো তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে। পাকিস্তানিদের লাথি-ঝাটাও তাদের কাছে ভালো লাগত, মনে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এটাই মনে করতে হবে। এটা মনে করেই এদের করুণা করতে হবে। কিন্তু, এরা চক্রান্ত করে, ষড়যন্ত্রকারী, সেটাও মনে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং তাদের পুরস্কৃত করেছিল। তবে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জিয়াউর রহমান কিন্তু সেভাবেই নিহত হয়েছিল। তার লাশও কিন্তু কেউ পায়নি। খালেদা জিয়া ও তার ছেলেও কখনো বলতে পারবে না, তার বাপের লাশ দেখেছে। সে কথা তো বিএনপি নেতারা একবারও স্মরণ করে না। একটা বাক্স এরশাদ সাহেব নিয়ে এসেছিল। কিন্তু, সেই বাক্সে কী ছিল? পরবর্তীতে এরশাদ সাহেবের মুখেই তো আছে যে, সেই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না। জিয়ার লাশ তারা পায়নি। জিয়ার লাশ কোথায় গেছে, কেউ পায়নি। কিন্তু, একটা বাক্স এনে সংসদ ভবনের সেখানে তারা রেখে দিয়েছে। সেখানে তারা ফুলের মালা দেয়। সেখানে লাশ নেই। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

পঁচাত্তর পরবর্তী ১৯টি ক্যু’র কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাজার হাজার সেনাবাহিনীর সৈনিক-অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। কত পরিবার লাশটাও পায়নি। জিয়াউর রহমান তাদের হত্যা করেছে। সব লাশ গুম হয়েছে। তারা কখনো জানতেও পারেনি, কী অপরাধ তাদের। পঁচাত্তরের পর যখন জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল, তখন থেকে দেশের গুম-খুন শুরু হয়। খালেদা জিয়া এসেও আমাদের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও আমাদের নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছে।’

‘কাজেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস যারা এখন বলে, অংশগ্রহণ থাকতে হবে নির্বাচনে…। অংশগ্রহণটা হবে কিভাবে? যে দল ক্ষমতা দখলকারী, অবৈধভাবে সৃষ্টি হয়, দুর্নীতি-খুন-হত্যা-অস্ত্র চোরাচালানের দায়ে যে দলের নেতারা সাজাপ্রাপ্ত আসামী পলাতক।’

এ সময় বিএনপির এক নেতার কথার প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা বলেছেন, তারেক জিয়াকে নাকি আসতে দেওয়া হয় না। এটা মিথ্যা কথা বলেছে। ২০০৭ সালে তারেক জিয়া তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়।’

‘বিএনপি নেতাদের সেটা তো ভুলে যাওয়ার কথা না। এটা লিখে দিয়ে সে কিন্তু চলে যায়। কাজেই তাকে তো কেউ বিতারিত করে নাই। স্বেচ্ছায় চলে গিয়ে আর সে ফিরে আসে নাই। একজন রাজনৈতিক নেতার যদি ফিরে আসার সাহস না থাকে, সে আবার নেতৃত্ব দেয় কিভাবে? আমাকেও তো বাধা দিয়েছিল তত্ত্ববধায়ক সরকার। মার্ডার কেস দিয়েছিল, ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দেশে এসেছিলাম। মামলা মোকাবিলা করেছিলাম। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছি। এরপর আমাকে কারাবন্দি করেছে। আমি জানি, রাজনীতি করি, কারাবন্দি হতেই হবে। কিন্তু, আমাকে তো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান গ্রেনেড মেরে হত্যাও করতে চেয়েছে। কোটালীপাড়ায় বিশাল বোমা, সেটাতেও কি তাদের হাত ছিল না? বারবার হত্যাচেষ্টা এরাই তো করেছে।’

সংবিধানকে লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের নামে যে প্রহসন, এটা জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই শুরু। তার হ্যাঁ না ভোট। তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কারণ, সে সেনাপ্রধান হিসেবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে আবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়। সংবিধান মোতাবেক সেটা কখনোই পারে না। আর্মি রুলস অ্যাক্ট মোতাবেকও পারে না। তারপরও এই অবৈধ কাজগুলো সে করে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সব সময় ঠিক ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোট করা হয়েছিল। তখন এটাই ধারণা ছিল, যেহেতু ২০ দলীয় জোট হলো, তখন আওয়ামী লীগ তো সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেতেই পারে না। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে চিনতেন এবং তিনি সংগঠনটাও সেভাবেই গড়ে তুলেছিলেন। তিনি জানতেন, মাত্র দুটি ছিট ছাড়া সবই তিনি পাবেন। পরে অসহযোগ আন্দোলন হলো। এই ধরনের অসহযোগ আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’

১৯৭৪ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারপরও দেখেছে, বাঙালির মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে পারছে না। তখনই আঘাত হানে। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছেন। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ১৫ আগস্ট শুধু যে আমরা আপনজন হারিয়েছি তা তো না, বাংলাদেশ তার যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল, সেখান থেকেই বিচ্যুত হয়েছিল।’

বন্যা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি স্বশস্ত্র বাহিনী বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছে, জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বন্যার্তদের উদ্ধার করা, চিকিৎসা দেওয়া, খাদ্য দেওয়াতে এতটুকু গাফিলতি নেই।’

১৯৭৪ সালে জাতির পিতা যখন জাপানে যান, তার অনুরোধে যমুনা সেতুর জন্য সমীক্ষা হয়েছিল, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সেটা বন্ধ করে দেয়। জেনারেল এরশাদ আসার পর আবারও উদ্যোগ নেয় যমুনা সেতু করার। যতটুকু কাজ এরশাদ করে গিয়েছিল, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে খুব বেশি এগোতে পারেনি। কারণ, সব জায়গায় কমিশন খাওয়ার অভ্যাস। আবার কমিশন তো একজনকে দিলে হবে না। মায়ের জন্য একটা, দুই ছেলের জন্য, আবার ফালুর এজন্য, অমুকের জন্য, তমুকের জন্য করতে করতে কেউ আর কাজ করতে পারত না।’

‘আমরা ক্ষমতায় এসে এই সেতুতে রেল লাইন, গ্যাস লাইন, বিদ্যুতের লাইন দিয়ে ডিজাইনটা যোগ করে মাল্টিপারপাস সেতু করি। এই রেললাইন করা নিয়ে তখন বিশ্বব্যাংকের আপত্তি ছিল। তখন তাদের কথা আমি শুনিনি। তাদের কথা ছিল, রেললাইন লাভজনক হবে না। আমার কথা ছিল, লাভজনক হবে। রেললাইনটাই কিন্তু সবেচেয় বেশি লাভজনক হয়। যে কারণে তারা একটা স্বতন্ত্র রেল সেতু করার জন্য ফিরে এসেছে।’

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।