রাজনীতি

এই শহর তাদের দিয়ে গেলাম, আতঙ্ক নেই: কাদের

আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আতঙ্কের কারণ নেই। আমরা চলে যাচ্ছি কাল সাভারে। ঢাকায় আমরা নাই।’

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভায় এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সড়ক-মহাসড়কে কমে গেছে যানবাহন চলাচল। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এ পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হয়নি সাধারণ মানুষ।

এ প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা থাকবে গোলাপবাগে, মানুষ কেন আতঙ্কিত হবে? জনগণকে বলব, আতঙ্কের কারণ নেই। আমরা চলে যাচ্ছি কাল সাভারে। ঢাকায় আমরা নাই, আমরা কাল সাভারে চলে যাচ্ছি।’ “বিএনপি... এই শহর তাদের দিয়ে গেলাম। আতঙ্ক কেন। আমরা ক্ষমতায়, আমরা কেন অশান্তি চাইব? আমরা কেন বিশৃঙ্খলা করব। আরও এক বছর বাকি, নির্বাচন হবে, ইনশাল্লাহ।’

গোলাপবাগে সমাবেশ করতে রাজি হওয়ায় বিএনপির অর্ধেক পরাজয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি আজ বলে, সরকার নাকি ভয় পেয়েছে। সরকার ভয় পেয়েছে? মহানগর নাট্যমঞ্চে সভা, এদিকে গুলিস্তান, বঙ্গভবনের আশপাশ এলাকায় লোকে লোকারণ্য। কাদের পরাজয় হলো? অর্ধেক পরাজয় হয়ে গেছে, পল্টনে সমাবেশ করতে পারেনি। আন্দোলন কর্মসূচির পরাজয় এখানেই অর্ধেক হয়ে গেছে।’

‘আজকে ঢাকা সিটিতে বের হয়ে বুঝতে পারলাম, আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। আমাদের নেত্রীর ডাকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা আজ প্রস্তুত।’

সঙ্কটের মেঘ চলে যাওয়ার আভাস আগেই দেওয়ার কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি দুই দিন আগে বলিনি, মেঘ চলে যাবে? আমি বলিনি যে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত সমাধানে আসবে? পল্টন থেকে ভেবেছিলাম বাঙলা কলেজ, না হলে গোলাপবাগ। অবশেষে মেনে নিয়েছে, শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রস্তত থাকার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তৈরি হয়ে যান, প্রস্তত হয়ে যান। যারা আমার সহস্র জননীর বুক খালি করেছে, যারা এ দেশের শত শত মায়ের কোল খালি করেছে; সন্তানহারা মায়ের কান্না, স্বামীহারা নববধূর ফরিয়াদ, ভাইহারা বোনের আর্তনাদে বাংলার বাতাস আজও ভারী।’

‘যারা ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যারা ৩ নভেম্বর  জেলহত্যা ঘটিয়েছে, যারা জয় বাংলা নিষিদ্ধ করেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিষিদ্ধ করেছিল, যারা স্বাধীনতার ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল, যারা হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে, আমেরিকা সিঙ্গাপুরে ধরা খেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’

তারেক রহমানের দেশে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জেলে গিয়ে রাজনীতি করবেন, সেই সাহস তারেক রহমানের নেই। বলে, আসবে। কবে আসবে? ২০০৭ সাল থেকে ১৫ বছর। ১৫ বছরে এলো না। আসবে কবে? কবে আসবে? ক্ষমতায় গিয়ে আন্দোলনের মুখে তাকে নিয়ে আসবেন।’

‘ওই চিন্তা করে লাভ নেই। বিএনপি স্বপ্ন দেখছে, দিবাস্বপ্ন। বিএনপি দুঃস্বপ্ন দেখছে। অচিরেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রঙিন খোয়াব কর্পূরের মতো উবে যাবে।’

বিদেশিদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুদের বলি, আমরা আপনাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। এই দেশের দূতাবাসে যেসকল বন্ধু দেশের প্রতিনিধি আছে, আপনারা এখানে কারও পক্ষ নেবেন না। আমাদের ঘরের ভেতরে হস্তক্ষেপ করবেন না। আমরা জানি, আমাদের গণতন্ত্র কিভাবে সংরক্ষণ করব।’

গণমাধ্যমের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিছু মিডিয়া। আপনারা তাদের চিনেন, চিনে রাখুন। সময়মতো জবাব পাবে তারা, সত্যের বিরুদ্ধে যারা আজকে যাচ্ছে। কোনো কোনো মিডিয়া রাতে এবং সকালে যখন দেখি, মনে হয় না, এখানে আর কোনো দল আছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে আর কোন দল বলেন? চট্রগ্রাম, যশোর, কক্সবাজার শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের সব সমাবেশ চট্টগ্রামের সমান হবে না।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মো. শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির প্রমুখ।