রাজনীতি

‘তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি’

বিএনপি তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিএনপির রাজনীতি ‘ভুলের চোরাবালিতে’ আটকে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি পথ হারিয়ে আজকে পদযাত্রা শুরু করেছে।’

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগকে ‘ভুল রাজনীতি’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তলে তলে তো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার নাটক করলেন কেন।’

‘ওই হারুন আর রুমিন ফারহানরা তো সংসদে কিছু কথা বলতে পারতো। সেটাও তো বন্ধ হয়ে গেলো। ফখরুল সাহেব আপনাদের রাজনীতি ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে। পদযাত্রা করে সেই পথ উদ্ধার করা যাবে না।’

এসময় বিএনপি পথ হারিয়ে আজকে পদযাত্রা শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল বলেন, পায়ের তলায় নাকি আমাদের মাটি নাই। পায়ের তলায় মাটি কার আছে, কার নাই; প্রমাণ করতে দরকার নির্বাচন। আসুন নির্বাচনে। ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই, খালি মাঠে খেলবো না। খেলা হবে। নির্বাচনে খেলা হবে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সাথে কোনো বৈঠক না হওয়ায় বা সরকারকে চাপ না দেওয়ায় বিএনপি হতাশ হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের।

‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, এবার শুধিতে হইবে ঋণ। ফখরুল সাহেব অনেক আওয়াজ দিয়েছেন। অনেক লম্ফঝম্প হয়েছে, এবার থামুন। ধীরে ফখরুল সাহেব, ধীরে চলুন। নরম তো হয়ে গেছে সুর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা ঘুরে গেছেন। তিনি ঢাকায় এলেন, বিএনপি আশা করে বসে ছিল তাদের সাথে একটা বৈঠক হবে। ডোনাল্ড লু বিএনপি’র পক্ষ নিয়ে সরকারকে চাপ দেবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। কী হলো? কী বার্তা পেলেন? বিএনপির সাথে বৈঠক হলো না। নিষেধাজ্ঞার জন্য বসে ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা এলো না। আসবেও না। খবরটা বেগতিক। মন খারাপ। হতাশায় ডুবতে ডুবতে বিএনপির নেতা ফখরুল আর মির্জা আব্বাস হাসপাতালে।’

কাদের বলেন, ‘ডোনাল্ড লুর শক্ত বার্তা না পেয়ে দুই নেতা চলে গেলেন এভারকেয়ার হাসপাতালে। পরে দেখে যে ইজ্জত যায়, বাইরে কর্মীদের কানাঘুষা; তারপর একজন একজন করে হাসপাতাল থেকে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আবির্ভূত হলেন। আবারো পালাবার গল্প শোনায় ফখরুল।’

আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না এবং মুচলেকা দিয়ে পালানোর গল্পটা বিএনপি নেতাদের মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালাননি। আমরা পালিয়ে যাইনি।’

এ সময় এক-এগারোর সরকারের সময়ে মির্জা ফখরুলের ভূমিকা কী ছিলো, সেই প্রশ্ন তুলে আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ওই কয়েকমাস জরুরি সরকারের ক্ষমতার সময়ে আপনি কোথায় ছিলেন। জেলে গেছেন নাকি বাইরে দালালি করেছেন। তখন আপনার পর্যায়ের নেতা বাইরে থাকতে পারে একমাত্র দালালি করলে।’

এক-এগারোর সরকারের সময়ে কানের চিকিৎসার সময়ে বিদেশ গেলেও জরুরি সরকারের সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে যাননি। এই অ্যাভিনিউতে হাওয়া ভবনের ইঙ্গিতে গ্রেনেড হামলায় তার একটি কানের শ্রবণশক্তি কমে গিয়েছিলো। কানের চিকিৎসা করতে সাময়িক সময়ের জন্য ডাক্তার দেখাতে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি লন্ডন থিব্রো বিমানবন্দরে আসেন। এই পল্টন থানায় মামলা দেওয়া হয়েছিল, তিনি যাতে আসতে না পারেন। ফখরুল সাহেব কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। মিথ্যাচার করবেন না। জরুরি সরকারের পক্ষ থেকে সব এয়ারলাইন্সকে নিষেধ করা হয়েছিল, শেখ হাসিনা যেন না আসতে পারে। তাকে টিকিট দেওয়া হবে না। তার টিকিট রিফিউজ করা হয়েছে। এয়ারপোর্ট থেকে বার বার বলা হচ্ছে। আপনি ফিরে যান। তিনি বললেন, আমি বসে পড়লাম। আমি আমার দেশে ফিরে যাবো। কত মামলা হবে। জেলে নেবে? ওই জেলকে আমি ভয় পাই না। বঙ্গবন্ধু ভয় পাননি। আমিও পাই না।’

‘ওয়ান ইলেভেনের পালানোর ইতিহাস শুধু আপনাদের। সেটা কাপুরুষের মতো। মুচলেকা দিয়ে আর রাজনীতি করবো না বলে পালিয়ে গেলেন টেমস নদীর পাড়ে লন্ডনে। সেই যে গেলো যুবরাজ, আর তো এলো না ফিরে। সৎ সাহস নাই রাজনীতি করার, জেল-জুলুম সহ্য করার; তাহলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন, ফখরুল সাহেব এটা জিজ্ঞেস করেন। বুঝি তো। রিমোট কন্ট্রোলের নেতৃত্বে চলছেন। রিমোট কন্ট্রোলে আর যাই হোক, বাংলাদেশে আন্দোলনে জেতা যাবে না। এখনও বুঝতে পারেননি?’

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, উত্তর-দক্ষিণ অমুক-তমুকের আওয়ামী লীগের না, এক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

এ সময় মহানগরের দায়িত্বশীল নেতাদের এলাকাভিত্তিক কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে কমিটিগুলো দ্রুত পূর্ণাঙ্গ করতে নগরের শীর্ষ দুই নেতাকে নির্দেশ দেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মহানগরের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, মিসবাউর রহমান রতন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, মিরাজ হোসেন প্রমুখ।

সভা পরিচালনা করেন দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ ও সদস্য আনিসুর রহমান সরকার।