রাজনীতি

সংস্কার নিয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরলেন এনসিপি নেতারা

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ ও জেলা কাউন্সিলের নির্বাচনমণ্ডলীর অংশগ্রহণ ও নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়াসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুর সোয়া ২টায় এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে দলটির সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সরোয়ার তুষার এ কথা জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ও কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসেন।

এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির কো-অর্ডিনেটর সরোয়ার তুষার বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেক্টোরাল কলেজ ও দ্বিকক্ষ নির্বাচনের পর ৬৪টি জেলা কাউন্সিলের ভোট ও এই নির্বাচনমণ্ডলীর বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। পাশাপাশি নির্বাচকমণ্ডলীর আওতা বাড়াতে সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে আনতে চেয়ে আমরা মতামত জানিয়েছি।”

তিনি বলেন, “সংসদের স্থিতিশীলতা ও সংসদ সদস্যদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অর্থাৎ অর্থবিল ও অনাস্থা ভোট বাদে যেকোনো বিষয়ে দলের বিরুদ্ধে ভোট প্রদান করার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।পাশাপাশি সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ৭০ অনুচ্ছেদ (দলীয় সিদ্ধান্তের বিপরীতে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার সীমিতকরণ) কার্যকর করা যায় কিনা সেটা আমাদের ভেবে দেখার জন্য কমিশন অনুরোধ করেছেন। আমরা তাদেরকে জানিয়েছি, এখানে আমরা আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করিনি, আমরা চাই দলের বিরুদ্ধে চাইলে কেউ ভোট দিতে পারবেন।”

পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সুপারিশের স্প্রেডশিট অনুযায়ী একমত হয়ে তারা কিছু বিষয়ে অধিকতর মতামত দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এসব বিষয়ে আছে- প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে নির্বাচন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ও এর কাজের আওতার পরিধি, মেয়াদ পূরণের পর নির্বাচন কমিশন এর দুর্নীতি বা সাংবিধানিক দায়িত্ব লঙ্ঘন বা অনিয়মের ক্ষেত্রে, জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটি নয় বরং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত ও জুডিশিয়াল রিভিউ, রাষ্ট্রের মূলনীতি ও প্রস্তাবনাসহ নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দুইকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের পর গণভোটের বিধান।

এ সময় তিনি বলেন, “ফরিদপুর এবং কুমিল্লাকে পৃথক দুটি বিভাগে পরিণত করার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে এনসিপি একমত হয়েছে।”

তুষার বলেন, “এর বাইরে কিছু বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি যেমন, প্রাদেশিক সরকার। আমরা মনে করি এই মুহূর্তে প্রাদেশিক সরকার দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বরং স্থানীয় সরকারকে আরো দক্ষ ও শক্তিশালী করতে পারলে সেটি আমাদের জন্য লাভজনক হবে। এছাড়া, কিছু-কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যেমন-স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি ও ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংসদের স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব একজন বিরোধীদলীয় নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মামলা গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিচার বিভাগের কাছেই বিচারিক ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন বলে আমরা জানিয়েছি। জেলা পরিষদ বাতিল ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্তকরণ বিষয়ে আমরা দ্বিমত পোষণ করেছি। সেই সঙ্গে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার নয়, বরং সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে মত দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিলের জন্য দাবি জানিয়েছি। আমরা মনে করি, প্রতীক দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচনকালে সহিংসতার একটি অন্যতম কারণ এটি বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রণীত একটি বিষয় ছিল। সাংস্কৃতিক বিপর্যয় এড়াতে ও স্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।”

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রতি আয়কর বর্ষেই সম্পদের হিসাব সরকারকে দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব জানিয়েছে দলটি। এছাড়া নিম্ন কক্ষে ১০০ আসনে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন, উচ্চ কক্ষে ১০০ আসনের ২৫ শতাংশ নারী আসনের জন্য তারা একমত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

১৯ এপ্রিল প্রথম বৈঠকের পর মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

বৈঠকের শুরুতে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেরসহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের হাতে সংস্কার প্রস্তাবনা হস্তান্তর করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এনসিপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলটির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম-আহবায়ক সরোয়ার তুষার ও জাবেদ রাসিন।