রাজনীতি

দেশ যেন আবারো ফ্যাসিবাদের পরিচিতি না পায়: মঈন খান

মানুষকে ধোঁকা দিয়ে কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বাংলাদেশ যেন আবারও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিত না হয়—সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। 

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

মঈন খান বলেন, “সাম্প্রতিক হিসাব মতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে ১৭ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ বৃহৎ শহরে পরিণত হবে। কিন্তু সেই শহর কীভাবে পরিচালিত হবে—সেটিই আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।”

তিনি বলেন, “অর্থনৈতিকভাবে আমরা এখনো শক্তিশালী না হলেও ইনফরমাল ইকোনমির ওপর ভর করে মানুষ কোনোভাবে টিকে আছে। ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তাদের এসব বাস্তবতায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—যেমনটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে করে দেখিয়েছিলেন।”

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “দেশসেবার পরিবর্তে দলটি আত্মসেবায় মনোযোগী হয়েছিল। তারা একটি অলিগার্কি ব্যবস্থা কায়েম করে সমাজের ধনীদের আরো শক্তিশালী করেছে। এর ফলে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়েছে।”

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে এবং কোষাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আবুল কেনান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ডা. খালেকুজ্জামান দীপুসহ ড্যাব ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

মঈন খান বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়েও আমরা আজ গণতন্ত্র খুঁজে ফিরছি। অথচ এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই একাত্তরে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই সেই যুদ্ধ হয়েছিল। যারা অতীতে ও বর্তমানে দেশ পরিচালনা করেছেন, তাদের এই ব্যর্থতার জবাবদিহি করতে হবে।”

তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কথা বলছে। কিন্তু সংস্কার কোনো এককালীন বিষয় নয়—এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মধ্য দিয়েই আমরা একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করেছি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা সারা বছর নানা দিবস পালন করি। কিন্তু প্রশ্ন হলো—৫৪ বছরে আমাদের প্রকৃত অর্জন কী? মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত না হলে এসব আয়োজন অর্থহীন। প্রথমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মানুষ না খেয়ে থাকতে পারে, কিন্তু কথা না বলে থাকতে পারে না।”

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—যখনই কোনো স্বৈরশাসক মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, তখনই বিদ্রোহ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা অনেক সময় নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে, মানুষের অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে।”

সভায় বক্তব্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনেই নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে।”

তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। এর মাধ্যমে তার দীর্ঘ নির্বাসনের অবসান ঘটবে।”

তিনি জামায়াতের রাজনীতি প্রসঙ্গে বলেন, “ছাত্রসংসদের কয়েকটি নির্বাচনে জয়ী হলেই সারা দেশে জনপ্রিয়তা প্রমাণ হয় না।” 

অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, নিজে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তিনি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে বহুমুখী উদ্যোগ নেন।” 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, “যারা আজ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তৎপর, দেশের মানুষ জানে মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী ছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ইতিহাস তুলে ধরা জরুরি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জনগণের ভোটে সরকার গঠন করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে।”