রাজনীতি

তারেক রহমানের আগমন ঘিরে ‘জিরো রিস্ক’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রায় ১৮ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগমনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ‘জিরো রিস্ক’ নীতিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। 

তারেক রহমানের ঢাকায় আগমন ঘিরে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে একটি শব্দই-‘নিরাপত্তা।’

দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাসিত থাকা একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন দেশ নির্বাচনমুখী, রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে এবং সাম্প্রতিক কিছু সহিংস ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ বিরাজ করছে। ফলে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে সামান্য কোনো ত্রুটি বা অবহেলাও বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই সর্বোচ্চ সতর্কতার পথে হাঁটছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে নির্ধারিত গন্তব্য পর্যন্ত পুরো রুটকে ‘হাই রিস্ক জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়, একাধিক স্তরের চেকপোস্ট, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ জোরদার এবং সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এই সতর্কতার একটি স্পষ্ট নজির হলো ভিআইপি আগমন উপলক্ষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত ফ্লাইটে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কেবিন ক্রুকে শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহারের ঘটনা। প্রশাসনিকভাবে এটি একটি রুটিন সিদ্ধান্ত হলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এর মধ্য দিয়ে ‘জিরো রিস্ক অ্যাপ্রোচ’-এর বার্তাই দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য যেকোনো ঝুঁকি আগেভাগেই নাকচ করে দেওয়ার কৌশল হিসেবেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

অন্যদিকে, নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় ও জটিল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্ভাব্য জনসমাগম। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসতে পারেন। সেই বিবেচনায় রেলপথে স্পেশাল ট্রেন কিংবা অতিরিক্ত বগি সংযোজনের আবেদনও করা হয়েছে।

কিন্তু নিরাপত্তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এই জনসমাগমই পুরো পরিস্থিতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর দিক। অতীতে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, নাশকতা কিংবা বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। নিয়ন্ত্রিত না হলে আবেগঘন মুহূর্ত মুহূর্তেই বিশৃঙ্খলায় রূপ নিতে পারে। ফলে জনস্রোতকে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেটিই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় পরীক্ষার বিষয়।

সূত্র জানায়, জাতীয় ও মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরইমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও সম্ভাব্য উস্কানিদাতাদের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে। প্রয়োজনে প্রিভেন্টিভ গ্রেপ্তার, নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং জনসমাবেশে বিধিনিষেধ আরোপের মতো ব্যবস্থাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেজন্য আগাম প্রস্তুতির পথেই হাঁটছে প্রশাসন ।

অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তেজনার মধ্যে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়ে ঘটছে। এই মুহূর্তে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, পুরো রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও রাজনৈতিক পরিবেশকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও অভ্যার্থনা কমিটির আহ্বায়ক সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, “তারেক রহমান একজন জনমানুষের নেতা এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।”

বিএনপি চায়, শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ অভ্যর্থনা। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার দায় বিএনপি নিতে চায় না। এ কারণেই নেতাকর্মীদের আইন নিজের হাতে না নেওয়া এবং প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে নিরাপত্তা প্রশ্নটি এখন আর শুধু একজন ব্যক্তির সুরক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রের সক্ষমতা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক সহাবস্থানের একটি বড় পরীক্ষা। এই প্রত্যাবর্তন যদি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, তবে সেটি দেশবাসীর কাছে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক বার্তা দেবে। আর সামান্য ব্যত্যয়ই তৈরি করতে পারে বড় সংকট।