রাজনীতি

বাবার সমাধিতে অশ্রুসিক্ত তারেক রহমান

যে হাত ধরে হাঁটতে শিখেছিলেন, যে কণ্ঠে প্রথম শুনেছিলেন দেশপ্রেমের গল্প—সেই বাবার সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তারেক রহমান। চোখ ছলছল, কণ্ঠ নীরব। প্রায় ৪৪ বছর আগে নিহত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘসময় প্রার্থনায় কাটালেন তিনি।

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জিয়া উদ্যানে বাবার সমাধিতে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন।

প্রথমে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা এবং চব্বিশের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। পরে বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দুহাত তুলে একান্তভাবে মোনাজাত করেন তারেক রহমান। কিছু সময় তিনি একা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় একাধিকবার তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়, চারপাশে তখন নিস্তব্ধতা।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে, সে সময় তারেক রহমানের বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। কৈশোরেই বাবাকে হারানোর বেদনা বয়ে বেড়ানো এই তিনি জীবনের আরেকটি বড় আঘাত পান ২০১৫ সালে, নির্বাসিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো। এর মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ মা বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সব মিলিয়ে পারিবারিকভাবে কঠিন সময় পার করছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।

ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১৫ মাস পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফেরেন তারেক রহমান। সেদিন লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পূর্বাচলের জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে সংবর্ধনা গ্রহণ করেন তিনি। এরপর ছুটে যান অসুস্থ মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে। রাত কাটান গুলশানে তার জন্য প্রস্তুত করা বাসভবনে।

শুক্রবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বুলেটপ্রুফ বাসে গুলশানের বাসা থেকে জিয়া উদ্যানে যান তারেক রহমান। পথে পথে নেতাকর্মীদের ভিড়, শুভেচ্ছার জবাব দিতে বাসের ভেতর দাঁড়িয়ে হাত নাড়েন তিনি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাস থেকে নেমে হেঁটে বাবার সমাধিতে পৌঁছান। সেখানে প্রায় ১০ মিনিট অবস্থান করেন। ভিড় সামাল দিতে নিরাপত্তাবাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়।

সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রওনা হন। তবে দিনের সবচেয়ে ভারী মুহূর্তটি ছিল বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে নীরব চোখের জল, যেখানে রাজনীতি থেমে গিয়ে শুধু একজন সন্তান দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।