পজিটিভ বাংলাদেশ

সম্ভাবনাময় ফল সাতকরা, যাচ্ছে বিদেশেও

আহমদ নূর : সিলেট অঞ্চলে মানুষের প্রতিদিনের খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘সাতকরা’ ফল। সুস্বাদু খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত এ ফল এখন দেশের পাশাপাশি ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও নাম করেছে। অর্জন করছে বৈদেশিক মুদ্রাও। সাতকরা ফল প্রথম চাষ শুরু হয় ভারতের আসাম রাজ্যে। আঠারো শতকের শুরুর দিকে এ ফলের চাষ শুরু করেন ওই এলাকার সৌখিন চাষিরা। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চেলে এর চাষ শুরু হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। এ ফলের সকল অংশ রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ফল সিলেটের মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রধান অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবেও এখন সিলেটে চাষ হয় সাতকরা। আট বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে এ ফল রপ্তানি শুরু হয়। গত দুই বছর ধরে সাতকরার আচার ও এটি শুকিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকায় রপ্তানি করা হচ্ছে। সাতকরা রপ্তানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ ভেজিট্যাবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে সাতকারা দিন দিন খুবই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে বাঙালি রেস্তোরাঁয় এর কদর অনেক বেশি। প্রতি বছর পাঁচ হাজার মণের ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা মূল্যের সাতকরা বিদেশ রপ্তানি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ সাতকরা উৎপাদন করতে পারলে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি সাতকরা বিদেশে রপ্তানি সম্ভব হতো। তবে এক্ষেত্রে এর মান ঠিক রাখতে হবে। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার। যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশ্যায়ারের ‘বাংলা ফুড’ রেস্তোরাঁর মালিক ও শেফ ফারুক আহমদ ফেসবুকে রাইজিংবিডিকে বলেন, ১০ বছর আগে রসনা বিলাসীরা বাংলাদেশ থেকে শুকিয়ে বা আচার বানিয়ে সাতকরা লন্ডনে নিয়ে আসতেন। তখন এটি বাজারে পাওয়া যেত না। বিশেষ করে মাংসে এর ব্যবহারে স্বাদ বেড়ে যায়। ফলে খাবারে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সাতকরা ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, সাতকরার বিশেষত্ব হলো এর সুন্দর ঘ্রাণ। পাশাপাশি এটি সামান্য টক। এটি গরুর বা খাসির মাংসে ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।

এক্ষেত্রে ভাল সাতকরা বাছাই করে নিতে হবে। বাজারে দুই ধরনের সাতকরা আছে। অপেক্ষাকৃত হালকা সাতকরা খেতে বেশি সুস্বাদু। আর ভারী সাতকরা একটু তিতা হয়। তবে সেটিও খাওয়া যায়। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এখন বিদেশে সাতকরা রপ্তানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ জন্য চাষিরা সাতকরা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় এ ফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। সাতকরার বৈজ্ঞানিক পরিচিতি : উইকিপিডিয়ার সূত্র মতে, সাতকরার বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রাস ম্যাক্রোপটেরা (Citrus macroptera)। এটি ভারতের আসাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার ফল। তবে উত্তরপূর্ব অঞ্চল মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মনিপুর রাজ্যেও এর চাষ হয়। বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্ত অঞ্চল জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট,  শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া অঞ্চলেও এ ফল জন্মায়। এর পাতা দেখতে অন্য সকল সাইট্রাস (লেবুজাতীয়) ফলের পাতার চেয়ে ভিন্ন। যে কারণে একমাত্র পাতা দেখেই এ গাছ চেনা সম্ভব। পাতা বড় দুইটি অংশে বিভক্ত। যা অন্য কোনো লেবু জাতীয় ফলে দেখা যায় না। চার বছর আগে ১০০টি গাছ নিয়ে সাতকরা বাগান করেছিলেন কুলাউড়ার শাকির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশে এর চাহিদা তৈরি হওয়ায় ছোট পরিসরে এর চাষ শুরু করেছি। দুই বছর পর ফল পাওয়া শুরু করেছি। এখন বাগান সম্প্রসারণের চিন্তা করছি।’ তিনি বলেন, সাতকরা বাগান করলে অনেক সময় দিতে হয়। কারণ বিভিন্ন সময় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে। এ সময়ে একটু বেখায়ালি হলেই গাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তবে এসব ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছি।’ সাতকরা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু ফল। বমিনাশক, রুচিবর্ধক ও হজম সহায়ক হিসেবে এটি কাজ করে। পাশাপাশি বাত ব্যাথার জন্যে এটি অনেক উপকারী বলে জানিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এইচএমও ডা. মোহাম্মদ জাহিদ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/আহমদ নূর/হাসান/সাইফুল