পজিটিভ বাংলাদেশ

পোস্ট অফিসগুলোতে ফের প্রাণস্পন্দন

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : ডিজিটাল হাওয়ায় ফুরিয়ে এসেছে চিঠিপত্রের দিন। মানুষ মোবাইল ফোন নির্ভর হয়ে পড়ায় এক সময়ের ব্যস্ত পোস্ট অফিসগুলো হয়ে যায় জনশূণ্য। স্থবির হয়ে পড়া সে পোস্ট অফিসগুলোতে প্রাণ ফিরে এসেছে আবার। জনগুরত্ব হারানোয় দীর্ঘদিন ধরে অযতœ আর অবহেলায় পড়ে ছিল দেশের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডাকঘর। যার অনেকগুলো ঘুণে খেয়ে ফেলেছে। ঘুণেধরা এসব অফিসে বসেই পোস্টমাস্টাররা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেখার অভাবে গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার অবস্থায় ছিল এক সময়ের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। তবে সে অতল সমুদ্র থেকে টেনে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা ডাকঘরগুলোকে ডিজিলাইজড করার উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। চালু করা হয় পোস্ট ই-সেন্টার। ২০১২ সালে প্রকল্প শুরু হলেও ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এর কার্যক্রম এখন তৃণমূল পর্যায়ে। আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, নাগরিক সেবা প্রদানে ডিজিটাল পদ্ধতি এবং গ্রাম ও শহরের দূরত্ব কমাতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হবিগঞ্জ সদরের রিচি পোস্ট ই-সেন্টারে প্রশিক্ষণ

 

সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ পোস্টাল ডিভিশনের ২০৪টি পোস্ট অফিসের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২৬টিতে পোস্ট ই-সেন্টার কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে। শীঘ্রই প্রতিটি পোস্ট অফিসকে পোস্ট ই-সেন্টারের আওতায় আনা হচ্ছে। ফলে পোস্ট অফিসগুলোতে ঘুণ ধরার বিপরীতে প্রাণ ফিরে আসছে। শুধু চিঠি আর মানিগ্রাম আদান-প্রদান নয়, তৃণমূল মানুষ নানা প্রকার সেবা পাচ্ছেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। সূত্র জানায়, প্রতিটি ই-সেন্টারে ৩টি ল্যাপটপ, ৩টি বিজয় লে-আউট কি-বোর্ড, ৩টি মাউস, একটি এইচপি লেজারজেট প্রিন্টার, একটি কালার প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, হেডফোন, টেলিটক সিম, ইন্টারনেট মডেম, বক্সসহ এমকে সুইচ, আসবাবপত্র প্রদান করা হয়েছে। সাইনবোর্ড, পোস্টারসহ আরও কিছু উপকরণ সরবরাহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া যেসব অঞ্চলে বিদ্যুত এখনও পৌঁছায়নি সে সকল এলাকায় দেওয়া হচ্ছে সৌরবিদ্যুত। খুব তাড়াতাড়িই পোস্ট ই-সেন্টারগুলোতে দেয়া হবে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা। সূত্র জানায়, পোস্ট ই-সেন্টারে গ্রাম থেকে অনলাইন সুবিধা, ওয়েবক্যামের মাধ্যমে বিদেশের আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথোপকথন, বিদেশ হতে আগত বৈধ রেমিটেন্সের তোলা, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড ইএমটিএস, মোবাইল ব্যাংকিং- এসব সুবিধা ই-সেন্টারগুলোতে প্রদান করা হবে। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে সারাদেশে এক হাজারটি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর গ্রামীণ ডাকঘর নির্মাণ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

আউশপাড়া পোস্ট ই-সেন্টার উদ্বোধন করছেন সংসদ সদস্য আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির

 

এছাড়াও এ সেন্টার থেকে তৃণমূলের মানুষ কম খরচে ১৫ দিন, ১ মাস, ৩ মাস ও ৬ মাস মেয়াদী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সাদাকালো ও রঙিন ফটোকপি, কম্পিউটার কম্পোজ, সরকারি আবেদন ফরম, চাকরির আবেদন পূরণ, স্কুল-কলেজে ভর্তি ফরম পূরণ, ইন্টারনেট ব্যবহার, সরকারি-বেসরকারি ভাতা প্রদানসহ কৃষকদের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ভাতা প্রদান করা হবে। এসব কাজ পরিচালনার জন্য প্রতিটি ই-সেন্টারে কমিশন ভিত্তিক উদ্যোক্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনেক উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে নতুন করে পোস্ট অফিস পরিচালনা ও নাগরিক সেবা প্রদানের জন্য ঘর ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর ডাক অধিদপ্তর এবং এটুআই প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে পোস্ট ই-সেন্টার ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার টেকসইকরণের লক্ষ্যে নতুন ই-সেবা তৈরি ও বাস্তবায়ন, উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সেন্টারগুলোকে টেকসইকরণের লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা প্রদান, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সেবার সম্প্রসারণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া, পোস্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স সেবার সম্প্রসারণ, পোস্টাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে বলে জানা গেছে। এটা বাস্তবায়ন হলে পোস্ট ই-সেন্টার আরও উন্নত সেবা প্রদান করতে পারবে। হবিগঞ্জের পোস্ট ই-সেন্টারে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়। জানান, তারা খুবসহজেই আধুনিক তথ্যসেবা পাচ্ছেন। এতে তারা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছেন। সেবা প্রদানেও কোন প্রকারের অবহেলা নেই। রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/১৫ অক্টোবর ২০১৬/মামুন/টিপু