পজিটিভ বাংলাদেশ

জারবেরা চাষে দিন বদলে গেছে মাগুরার আজিজের

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : জারবেরা ফুল চাষে দিন বদলে গেছে মাগুরার বেলনগর গ্রামের আব্দুল আজিজের। তার ফুলের খেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে আরও দশজন মানুষের। আব্দুল আজিজের সাফল্য এখন অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত। বেলনগর গ্রামটি মাগুরা সদর উপজেলার কসুন্দি ইউনিয়নে। প্রায় চার বছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ঐ কর্মকর্তার জমিতে শুরু করেছেন ’জারবেরা’ ফুলের চাষ। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি এক একর জমিতে এ ফুলের আবাদ শুরু করেন। সাফল্যের কারণে বেড়ে যায় চাষের পরিধি। বর্তমানে তিনি প্রায় দুই একর জমিতে ফুল চাষ করছেন। আলাপকালে আজিজ বেশ গর্বের সাথেই শোনালেন তার ফুল চাষে সফলতার গল্প। জানালেন জারবেরা ফুল চাষের শুরু এবং তার চলমান কার্যক্রমের খুঁটিনাটি বিষয়। তিনি বললেন, জমির মালিককে চুক্তি মোতাবেক তার মাসিক টাকা পরিশোধ করেও ফুলের আবাদ থেকে যে উপার্জন হয় তাতে ভালই যাচ্ছে তার দিন। ফুল চাষের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে আসতে তার সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। ফুল চাষের মাধ্যমে শুধু যে তার জীবনের অভাবই দূর হয়েছে তাই নয়, তিনি এখন অন্য কিছু করার কথাও ভাবছেন। আজিজ জানান, বর্তমানে তিনি তার খেত থেকে প্রতিমাসে প্রায় এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেন। ফুলের চাষ থেকে যে উপার্জন হয় তা থেকে জমির মালিকের প্রাপ্য টাকা দেওয়ার পরও যা থাকে তা তার জীবন জীবিকার জন্য যথেষ্ট।  আজিজ আরও জানান, জারবেরা চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার ব্যবহার করেন তিনি। সে কারণে সারের জন্য খরচ পড়ে কম। চারা, সেচ এবং পরিচর্যা বাবদ যে অর্থ ব্যয় হয় সেটুকুই তার উৎপাদন খরচ। আজিজের মতে, জারবেরা খোলা মাঠে চাষ করা যায় না। এ কারণে আবাদের শুরুতেই অর্থাৎ জমিতে চারা লাগানোর আগেই প্লাস্টিকের টিনের ছাউনি দিয়ে শেড তৈরি করতে হয়। তিনি ৮টি শেডে জারবেরার আবাদ করছেন। এসব শেডগুলোতে বর্তমানে লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপি, বেগুনি, খয়েরিসহ ১৩টি রংয়ের ফুল রয়েছে। তার খেতের ফুল বিক্রি করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে বেশ পেরেশানিতে পড়তে হলেও এখন সেসব ঝামেলা পোহাতে হয় না তাকে। মাগুরা ছাড়াও ঢাকার আগারগাঁওয়ের পাইকারি ব্যবসায়ীরাও তার কাছ থেকে ফুল ক্রয় করেন। আজিজ তাদের কাছে প্রতি হাজার ফুল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। ঢাকায় এর প্রতিটি ফুল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা দরেও বিক্রি হয়ে থাকে বলে জানালেন আজিজ। মাগুরাসহ সারাদেশে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জারবেরা ফুলের ব্যবহার বাড়ছে ক্রমেই। ফলে এ ফুলের চাহিদাও উত্তোরোত্তর বাড়ছে জানান তিনি। বেলনগর গ্রামের অধিবাসি পার্শ্ববর্তী রামনগর হরিপদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারি-প্রধান শিক্ষক এএফএম আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, ‘আজিজের জারবেরা ফুল চাষে সাফল্য এখন এই এলাকার অনেকের জন্যই অনুপ্রেরণা। এখানকার অনেক বেকার যুবকই তাদের নিজস্ব জমিতে জারবেরা চাষের কথা ভাবছেন।’ মাাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন উৎসবে ফুেলর ডালি তৈরিতে জারবেরার ব্যবহার ব্যাপক। আজিজের সাফল্য অনেকের মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এ ফুলের ব্যাপারে জানতে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারে যোগাযোগ করছেন।’ রাইজিংবিডি/মাগুরা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আনোয়ার হোসেন শাহীন/টিপু