পজিটিভ বাংলাদেশ

অনন্য এক বিয়ে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : হাবিবার জন্মের আগেই মারা যান বাবা নুরু মিয়া। চার বছর বয়সে মারা যান মা খোদেজা বেগম। ছয় বছর বয়সে মামা মোশারফ হোসেন ও মামী লুৎফা বেগম হাবিবাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি শিশু পরিবারে দিয়ে যান। মা-বাবার আদর-স্নেহ ছাড়াই সরকারি শিশু পরিবারে ১২ বছর কাটিয়ে বড় হয়েছেন এতিম হাবিবা। সেই হাবিবার বিয়ে বিশাল আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাবার ভূমিকায় থেকে গোটা বিষয় দেখভাল করেছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। আজ শুক্রবার শিশু পরিবারে ধুমধামে বিয়ে হয়েছে। আলোচিত এই বিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছিল আলোচনা। আস্ত খাসি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে বরকে। আপ্যায়িত হন তিন শতাধিক মেহমান। রাজনীতিবিদ, প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সকল স্তরের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল হাবিবার বিয়ে। উকিল বাবা হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাবিবার গলার হার, কানের দুল ও হাতের চুড়ি দিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। নব দম্পত্তির আবাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বরের জামা-কাপড়, কনের স্বর্ণের চেইন, টেলিভিশন দেন জেলা প্রশাসক। পাত্রের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থা করা, সামগ্রিক সাজসজ্জা, অতিথিদের খাবার, কনের দুই পর্বের বিদায়ের আয়োজন করেছেন পুলিশ সুপার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের জাঁকজমক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের বাসভবন থেকে বর-কনেকে বিদায় দেওয়া হবে। হাবিবার বিয়েতে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, পৌর মেয়র নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। সরকারি শিশু পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে হাবিবার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাকে শিশু পরিবার ছাড়তে হবে। ডাকা হলো হাবিবার মামা-মামীকে। বিদায় বেলায় শিশু পরিবারের উপ-তত্বাবধায়ক রওশন আরাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলেন না হাবিবা। এতে হাবিবাকে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেন রওশন আরা। পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দুই মাস পরে মামা-মামীর কাছ থেকে হাবিবাকে পুনরায় শিশু পরিবারে নিয়ে আসেন রওশন আরা। পরে পুলিশ সুপারসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বিয়ের ব্যবস্থা করেন। সরেজমিন দেখা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি শিশু পরিবারের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্রধান ফটকে বিয়ের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা এসব তদারকি করছেন। পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সুশীল শ্রেণির সবাই বিয়েতে হাবিবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর শিশু পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জেলা পুলিশ সবসময় দিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, ‘হাবিবা সকলের জন্য উদাহরণ। আমরা চাইলেই অসাধারণ কিছু করতে পারি। শুধু মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। তাহলে সবার পাশে আমরা দাঁড়াতে পারব।’ রাইজিংবিডি/ব্রাহ্মণবাড়িয়া/১৪ জুলাই ২০১৭/সমীর চক্রবর্তী/বকুল