পজিটিভ বাংলাদেশ

পরিত্যক্ত ইটভাটায় সবুজের সমারোহ

৬০ বছর ধরে মাটি, কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হয়েছে ইট। দূষিত হয়েছে পরিবেশ। চার থেকে পাঁচ বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় চাঁদপুর সদরের শাহাতলীর ইটভাটাটি। এরপর বালু দিয়ে ভরাট করা হয় জায়গাটি। লাগানো হয় দেশ-বিদেশি ফলের গাছ। এসব গাছে এখন ধরেছে রসালো ফল।

এই বাগানের উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কৃষির প্রতি আমার এক ধরনের আগ্রহ কাজ করে। ঝুঁকি নিয়ে বেশ কিছু টাকা খরচ করে ইটভাটার পরিত্যক্ত জমিতে করেছি ফলের বাগান। নাম দিয়েছি ‘ফ্রুটস ভ্যালি’। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এগ্রো প্রজেক্টে উন্নত জাতের ফলের চাষ হচ্ছে। যা দেশে সম্ভবত এই প্রথম। এসব গাছে ফলন আসতে প্রায় দেড় বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাই সাথী ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে, বিখ্যাত সাম্মাম, রকমেলন, মাস্কমেলনসহ তিন জাতের তরমুজ। এগুলোর ওপরে হলুদ ভেতরে লাল। আবার ডোরাকাটা সবুজ, ভেতরে গাঢ় হলুদ। প্রথমবারেই আশাতীত ফলন হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই অর্গানিক এসব ফল বাজারজাত করতে পারবো।’

হেলাল উদ্দিন জানান, অনলাইনে আগাম বুকিং দিলে সরাসরি বাগান থেকেও তাজা ফল সরবরাহ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রকল্পের প্রথম ফলন থেকে নামমাত্র মূল্যে ক্রেতার কাছে তাজা ফল সরবরাহ করা।

ফলবাগানে কাজ করেন হানিফ, অজয়, মিন্টু নামের ৩ যুবক। বাগানে কাজ করার সময় তারা বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেষা আশিক মাওলানা বাড়ির এই জায়গাটিতে প্রায় ৬০ বছর ধরে ইটভাটা ছিলো। এই জায়গাটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়। চারদিকে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে এখানে মাল্টা, বিভিন্ন জাতের তরমুজ, ক্যাপসি ক্যাম, ড্রাগন, পেঁপে, আম, বরই চাষ করা হচ্ছে। আমরা শুরু থেকে এখানে কাজ করছি। এখন কিছু গাছে ফল আসা শুরু করেছে।’

স্থানীয়রা বলেন, এমন অজপাড়াগাঁওয়ে বিদেশি ফলের বাগান অনেকের মাঝে উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রতিদিনই বাগান দেখতে লোকজন আসছেন।

হেলাল উদ্দিনের ফল বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, মাচার ওপরে ঝুলে আছে নানা আকারের তরমুজ। রয়েছে ৩ জাতের পারসিমন, লাল, হলুদ, পিংক, বেগুনি এবং গোল্ডেন ড্রাগন ফল। অরেঞ্জ, সিডলেস গ্রেপফ্রুট, বারোমাসি ভিয়েতনামের মাল্টার গাছ। সেখানে অস্ট্রেলিয়ান হানিগোল্ড, আলফানসো, ব্যানানা, নামডকমাই, কাটিমন, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকিসহ নয় জাতের আম গাছ। 

এ বিষয়ে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, বাগানটি কেঁচো সারের ব্যবহারসহ সর্বাত্মক প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। 

ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন মাহমুদ বলেন, ‘নীচু ও পরিত্যক্ত জমি ভরাট করে যেভাবে পরিবেশবান্ধব ফল চাষ শুরু হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমরা এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।’ 

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক জালাল উদ্দিনকে বলেন, ‘আমি মনে করি, এই এগ্রো প্রকল্পটি হবে দেশের মডেল ফল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যেখানে প্রথমবারের মতো এমন কিছু ফলের চাষ হচ্ছে। যা ছিলো অকল্পনীয়। দ্রুত এই বাগানটি পরিদর্শনে যাবো এবং সর্বাত্মক সহায়তা করবো।’