পজিটিভ বাংলাদেশ

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে তুষার ও রিপনের সাফল্য

আধুনিক যুগে পাল্টে গেছে মাছ চাষ। জমির স্বল্পতার জন্য মাছ চাষ এখন ঢুকে গেছে বাড়ি ও ঘরের ভেতরে। বর্তমানে বায়োফ্লকের মাধ্যমে বাড়িতে ও ঘরের ভেতরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সিরাজগঞ্জের পৌর এলাকার সরকার পাড়ার তুষার আহম্মেদ ও চর-রায়পুর গ্রামের রিপন সরকার সফল হয়েছেন। 

কম খরচে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল হওয়ায় নিজ এলাকা পেরিয়ে এখন পুরো জেলায় মৎস্যজীবী হিসেবে পরিচিত হয়েছেন তারা। তাদের সফলতা দেখে জেলার শিক্ষিত বেকার যুবকদের মধ্যে মাছ চাষে দিনে দিনে আগ্রহ বাড়ছে। 

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এ সেক্টরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, এমন প্রত্যাশা দুই যুবকের। ইতোমধ্যেই তাদের হাত ধরে জেলায় নতুন পদ্ধতিতে মাছ চাষে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। একদিকে যেমন দেশি মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে আমিষের জোগান দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে। 

প্রতিবছর পুকুর খনন করতে গিয়ে যেমন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, ঠিক এ পদ্ধতিতে চাষ করতে গিয়ে নতুন করে তেমন পুকুর খননের প্রয়োজন হবে না। খাল-বিল কিংবা নদী-নালারও প্রয়োজন হবে না। বাড়ির আঙ্গিনায় অল্প জায়গায় ও স্বল্প পুঁজিতে মাছ চাষ করা সম্ভব। 

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সকালে মাছের খাবার দেওয়ার সময় তুষার আহম্মেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ইউটিউব চ্যানেলে মাছ চাষের ভিডিও দেখে আমার মনে আগ্রহ জন্মায়। বায়োফ্লক পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আমি রাজশাহী থেকে প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণ শেষে প্রায় দুই বছর আগে নিজ বাড়ির ঘরের মেঝেতে ৯০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হাউজ তৈরি করি। এতে আমার দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।’ 

‘এ কাজের অর্থ ও সহযোগিতা করেন আমার বাবা জাহাঙ্গীর আলম। এরপর সেখানে দেশীয় প্রজাতির মনোসেক্স তেলাপিয়া, শিং, কই ও পাঙ্গাস মাছের ২৫ কেজি পোনা দিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। মাছের পোনা ও খাবার কেনায় খরচ হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে মাছগুলো দুই লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’ বর্তমানে সেই হাউজে আবার একই মাছ চাষ হচ্ছে। এই মাছগুলো আগামী মাসে স্থানীয় বাজারে তিন লাখের বেশি বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তুষার আহম্মেদ।

তিনি আরও বলেন, ‘রেণু ছাড়ার ৭ দিনের মধ্যে পানি জীবানুমুক্ত ও প্রবায়োটিকের মাধ্যমে পানি তৈরি করা হয়। এরপর নিয়মিত ফিড খাবার এবং পানির গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়। পানির অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চিটাগুড় ব্যবহার করা হয়। অভিজ্ঞদের কাছ থেকে ও মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছি।’

রিপন সরকার বলেন, ‘পুকুর ইজারা নেওয়া যাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে অল্প পুঁজিতে স্বল্প জায়গায় মাছ চাষ করতে পারেন। ১০ কাঠা পরিমাণ জলাশয়ে যে পরিমাণ মাছ চাষ করা যাবে, তার একটি হাউজে সেই পরিমাণ মাছ চাষ করা সম্ভব। হাউজে মাছ চাষে খাবারের খরচটা কম লাগে। আমাগীতে আমার বায়োফ্লকে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করবো। তবে সরকার যদি বেকারত্ব দূরীকরণে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করে, তাহলে অনেক সুবিধা হবে। চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে মাছ চাষ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও হবে।’

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাহেদ আলী বলেন, ‘বায়োফ্লক পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় মাছ চাষ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে অনেকে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছে দেখে অনেকে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে দিনে দিনে আগ্রহ প্রকাশ করছে। জেলায় বর্তমানে ৭০ জন বায়োফ্লকে মাছ চাষ করছে। আগ্রহীদের সব ধরনের সহযোগিতাও করা হচ্ছে।’